২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে চুরি

প্রভাবশালী ভূমিদস্যু ও অভ্যন্তরীণ চক্র জড়িত

নিরাপত্তা প্রহরীদের গাফিলতি
-

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে রহস্যজনক চুরির ঘটনায় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রকে সন্দেহের মধ্যে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীণ চক্রও জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কী কী চুরি হয়েছে- সে বিষয়ে মামলায় সুস্পষ্ট কোনো তথ্য সন্নিবেশিত করতে পারেননি বাড্ডা অঞ্চলের সাবরেজিস্ট্রার। নিরাপত্তা প্রহরী বেষ্টিত এমন একটি সুরক্ষিত কমপ্লেক্সে দুর্বৃত্তরা অফিসের মূল্যবান জমির কাগজপত্র ও বালাম বই চুরি করেছে। তারা শুধু কম্পিউটারের হার্ডডিক্স চুরি করেনি, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজও নিয়ে গেছে যাতে তাদের চিহ্নিত না করা যায়। যেসব কম্পিউটারের হার্ডডিক্স চুরি হয়েছে সেগুলোতে উত্তরা, বাড্ডা ও পূর্বাচলের জমির খতিয়ান ও রেজিস্ট্রির তালিকা রয়েছে। ২০১৬ ও ২০১৮ সালেও এমন চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই চুরির বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষ শক্তভাবে আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জন্য আবারো চুরির ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ধারণা করছে, এবারের চুরির ঘটনাটি মনে হয়েছে পরিকল্পিত। এতে অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী, কর্মচারী ও কর্মকর্তারাও সন্দেহের মধ্যে আছেন। বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিসহ অন্যান্য সংস্থাও এটার তদন্ত শুরু করেছে।
ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবেকুন নাহার সাংবাদিকদের বলেন, দুর্বৃত্তরা কম্পিউটারের হার্ডডিক্স নিয়েছে। যেসব রেকর্ডপত্র বা কাগজপত্র তছনছ হয়েছে- সেগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। বালাম বই চুরি হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলা যাবে না। শুক্র ও শনিবার অফিস খোলা আছে। সব কিছু মিলিয়ে দেখে বলা যাবে যে এটা চুরি হয়েছে কি না। রাজধানীর রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সটি কেপিআই (রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করা আছে। এরপরও ঘটনাগুলো ঘটছে। আমরা খতিয়ে দেখছি। এখানে জনগণের আমানত রয়েছে। এটার নিরাপত্তার জন্য যা করা দরকার আমরা তাই করব।
সূত্র জানায়, বালাম বই চুরি হলে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জমির প্রকৃত মালিকরা। কারণ বালাম বই থাকে এক কপি। জমির দলিলের বর্ণনা বালাম বইয়ে উল্লেখ থাকে। চোর চক্র বালাম বইয়ে ২০০৬ সালের পর থেকে উল্লিখিত তথ্যগুলোর পৃষ্ঠা চুরি করতে পারে। এর আগে ২০১৬ সালে তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের গুলশান সাবরেজিস্ট্রার অফিসের বালাম বই চুরি করে। পরে পুলিশ চোর চক্রের পাঁচ সদস্যের কাছ থেকে বালাম বইটি উদ্ধার করে। এই চুরির সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের কয়েকজন এমএলএস ও দালাল চক্র জড়িত ছিল।
গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে গত বৃহস্পতিবার ভোরের যেকোনো সময়ে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে বাদি হয়ে বাড্ডা রেজিস্ট্রার অফিসের সাবরেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ২৪। মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলা, তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলার গ্রিল ভেঙে দুর্বৃত্তরা অফিসের মূল্যবান শত শত দলিল, বালাম বই, কম্পিউটারে হার্ডডিক্স ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চুরি করে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী হোসেন খান জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হয়েছে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা নথিপত্র উদ্ধার করা যায়নি।
ওসি আরো জানান, চোরের দল রেজিস্ট্রেশন কার্যালয়ের পেছনে দলিল লেখকদের টিনের চাল বেয়ে কমপ্লেক্স ভবনের দোতলার কলাপসিবল গেটের গ্রিল কেটে ঢুকে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবনের দোতলায় বাড্ডা ও তৃতীয় তলায় উত্তরা থানার সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের ফটকের তালা ভাঙা পাওয়া যায়। এই কক্ষ দুটিতে দুটি স্টিলের আলমারি ও ড্রয়ার ভাঙা ছিল। তৃতীয় তলায় জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের ফটকের তালাও ভাঙা পাওয়া গেছে। সেখানে সংরক্ষিত সিসি ক্যামেরা ডিভিআর খোয়া গেছে। তাই সিসি ক্যামেরায় কোনো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল থেকে হাত ও পায়ের ছাপের আলামত সংগ্রহ করেছে। কমপেক্স ভবনে কর্তব্যরত তিন নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এদিকে চুরির ঘটনার পর শুক্রবার সারা দিন রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের অফিস খোলা ছিল। কী কী চুরি হয়েছে তা কর্মকর্তারা তদন্ত করেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ভবনটির নিরাপত্তা প্রহরীদের গাফিলতি রয়েছে। ভবনে যখন তখন যে কেউ ঢুকতে পারে। এবার যেভাবে চুরি হয়েছে তাতে মনে হয়েছে যে, দুর্বৃত্তরা একাধিবার কমপ্লেক্সে এসে রেকি করে গেছে। এই চুরির সঙ্গে ভূমি ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। উত্তরা ও বাড্ডা এলাকার ২০০৬ সালের পর সম্পন্ন হওয়া দলিলগুলো টার্গেট ছিল ওই চোর চক্রের। দলিলের তথ্য গায়েব করতে তারা টার্গেট করে বালাম বই।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, উত্তরা ও বাড্ডা, পূর্বাচল একটি ভূমিখেকো গোষ্ঠী নিরীহ লোকজনের ভূমি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু ওই সব জমির বৈধ নথি থাকার কারণে তারা দখল করতে পারেনি। ওই চক্রটি ভাড়া করা চোরদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কমপ্লেক্সে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে। তাদের গ্রেফতার করা গেলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। কেউ কেউ বলেছেন তারা ধরা পড়লে এবার কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

সকল