২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাণিজ্যমেলায় ছুটির আমেজ বেড়েছে লোকসমাগম

-

মাসের শুরু থেকেই তীব্র শীতে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে পুরো জাতি। শীতের এই তীব্রতা সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সাথে সংশ্লিষ্টরা। রীতিমতো দর্শনার্থীর খরা চলছিল ২৫তম এ মেলায়। মাসব্যাপী এ মেলার গতকাল ছিল ১৭তম দিন। শুক্রবার ছুটির দিন। শীতের তীব্রতাও ছিল কম। ফলে মাসব্যাপী এ মেলা মাসের মাঝামাঝিতে এসে পেয়েছে প্রথম ছুটির আমেজ। দীর্ঘ খরা কাটিয়ে বেড়েছে লোকসমাগম। স্বাভাবিক কারণে বেড়েছে বেচা-বিক্রিও। গতকালই প্রথম দীর্ঘ লাইন ধরে টিকিট কাটতে এবং মেলায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের।
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছোঁয়ার আগে থেকেই টিকেট কাউন্টারের সামনে দেখা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর লাইন। পরে মূল ফটক উন্মুক্ত করে দেয়ার পরপরই দীর্ঘ সারিতে মেলায় প্রবেশ করে তারা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে তাদের সংখ্যা। দুপুর ১২টার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। ছাড় বা বিভিন্ন রকম অফার চলছে এসব স্টলগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মেলার গেট ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত মোফাজ্জল হোসেন পিন্টু বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরেই মেলার গেট ইজারা নিচ্ছি। এবার মেলার দর্শনার্থী তুলনামূলক অনেক কম। প্রথম ক’দিন তো তেমন দর্শনার্থীই হয়নি। গত সপ্তাহ থেকে কিছু দর্শনার্থী হচ্ছে। তবে আস্তেআস্তে মেলা শেষ সময়ে চলে আসছে। আশা করি এখন প্রতিদিনই ভালো দর্শনার্থী হবে।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীরা আসতে থাকেন। দুপুর ১২টার মধ্যেই চোখে পড়ার মতো দর্শনার্থী মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। আর বিকেল ৪টার পর মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। সন্ধ্যার আগেই দেখতে দেখতে দর্শনার্থীতে ভরে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। কোথাও কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এমন উপচে পড়া ভিড়ে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রয়কর্মীদের। বিক্রেতাদের চাপ সামাল দিতে কোনো কোনো স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বিশ্রাম নেয়ার সময় পাচ্ছেন না। ক্রেতাদের এমন সরব উপস্থিতিতে হাসি ফুটেছে মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারদের মুখে।
প্লাস্টিকের পণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আরএফএলের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আমাদের পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের অন্যরকম চাহিদা আছে। কারণ, আমাদের পণ্যের মান খুব ভালো। তা ছাড়া আমরা ক্রেতাদের আকর্ষণীয় ছাড়ও দিচ্ছি। এ কারণে মেলার শুরু থেকেই আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে ছুটির দিনগুলো বিক্রি বেশি হয়। আমাদের প্যাভিলিয়নের চিত্র দেখে বুঝতে পারছি এবারের মেলায় আজকেই মেলায় সব থেকে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছে। বিদেশী প্যাভিলিয়নে নারীদের জুয়েলারি বিক্রেতা আরিফুল বলেন, আজ মেলায় যেমন দর্শনার্থী এসেছে, বিক্রিও হচ্ছে খুব ভালো। সত্যিকথা বলতে কি গত ১৬ দিনে যা বিক্রি হয়েছে আজ একদিনেই প্রায় তার সমন বিক্রি করে ফেলেছি। আশা করি সামনের ছুটির দিনগুলোতেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
অভিভাবকদের সাথে মেলায় এসেছে শিশুরাও। কেনাকাটার চেয়ে মেলার দুইপাশে বসানো অস্থায়ী দু’টি শিশু পার্কই তাদের বেশি আগ্রহের জায়গা। জাম্পিং, হানিসিং, মিনিট্রেন, মিনি হেলিকপ্টারসহ দু’টি পার্কে ১০টি করে মোট ২০টি রাইড আছে। সেগুলোতে মনের আনন্দে হেসেখেলে বেড়াচ্ছে শিশুরা। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা হলেও এতে দেশীয় হকারের চলাচল যেনো বন্ধ হচ্ছে না। স্টল ও প্যাভিলিয়নের মাঝখানে খালি জায়গা কিংবা কোনো স্টলের কোলঘেঁষে পণ্য পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। মেলার ভেতরে প্রবেশ রয়েছে জুতা সেলাই, সিগারেট বিক্রেতারও। আর এতে মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বেশ বিরক্তি পোষণ করেছেন।
নানা অনিয়ম এবং হকার প্রসঙ্গে মেলা কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্বার্থ রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সচিব আব্দুর রউফ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। মেলার পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না, হকার তো প্রবেশ করতেই পারবে না। তবে যারা প্রবেশ করেছে বা তাদের প্রবেশে কেউ যদি উৎসাহ দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মনে রাখতে হবে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা, দেশী-বিদেশী ক্রেতা-দর্শনার্থীর মিলনমেলা।
আয়োজকরা জানান, ১৭তম দিনে মেলায় নারী, শিশু, তরুণ-তরুণীসহ ক্রেতা-দর্শনার্থী এবং সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে কেনাকাটাও জমে উঠেছে। এতে খুশি বিক্রেতারা। কেনাবেচা নির্বিঘœ করতে মূল প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে আশপাশে কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মেলা প্রাঙ্গণে মোতায়েন রয়েছেন। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও জাপান।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement