১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারায়ণগঞ্জ শহরে রাস্তায় ফেলা হয় মেডিক্যাল বর্জ্য চরম দুর্ভোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পথচারীরা

-

নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন মেডিক্যালের বর্জ্যসামগ্রী। আর এর ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বাড়ছে নগরবাসীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কাও। সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতাল বর্জ্য হাসপাতাল থেকে সিটি করপোরেশনের নেয়ার কথা। তারা নিচ্ছে না বলেই বাধ্য হয় রাস্তায় ফেলা হয়।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরে বড় দুইটি হাসপাতাল ছাড়াও রয়েছে অর্ধশতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বড় হাসপাতাল দু’টি থেকে বর্জ্য অপসারণ করে না নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ফলে রাস্তাঘাটে ফেলা হয় হাসপাতাল বর্জ্য। এ ছাড়া অন্যান্য ক্লিনিকও সুযোগমতো রাস্তায় ফেলে দেয় মেডিক্যাল বর্জ্য।
হাসপাতাল থেকে সকালে ফেলে যাওয়া বর্জ্য পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ১২টায় অপসারণ করে আবার দুপুরে বর্জ্য ফেলে বেলা ৩টায় অপসারণ করে। কখনো কখনো দুপুরের বর্জ্য সারাদিন ফেলে রাখা হয়। সেই বর্জ্য অপসারণ করা হয় পরদিন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বিপরীত দিকে ফুটপাথের পাশে সড়কে ময়লার ভাগাড়। সেখানে গৃহস্থালি বর্জ্যরে পাশাপাশি হাসপাতালের মেডিক্যাল বর্জ্য পড়ে আছে। সংক্রামক বর্জ্য যেমনÑ ব্যান্ডেজ, তুলা, স্পঞ্জ, রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি দ্বারা সংক্রমিত গজ, রক্ত সঞ্চালনের ব্যাগ-টিউব, রক্ত দ্বারা সংক্রমিত স্যালাইন সেট, সংক্রমিত সিরিঞ্জ ইত্যাদি ময়লার ভাগাড়ে পড়ে আছে। সেখানে ভনভন করছে মাছি। মেডিক্যাল বর্জ্যরে সাথে সম্পৃক্ত হওয়া এসব কীটপতঙ্গ মানুষের জন্য ভয়াবহ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা আলম শেখ জানান, এ রাস্তা দিয়ে আমরা প্রতিদিন চলাচল করি। রাস্তার পাশে হাসপাতালের ময়লা ফেলা হয়। সাধারণ গৃহস্থালি ময়লা থেকেও এ ময়লা অনেক বেশি ক্ষতিকর। হাসপাতালের মানুষ এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের চেয়ে ভালো বুঝে। তাদের কাছে এ কাজ আশা করা যায় না। তাদের এভাবে মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলতে নিষেধ করেছেন সাধারণ মানুষ। তারপরেও অবস্থায় কোনো ভিন্নতা আসেনি। প্রতিদিনই তারা হাসপাতালের পাশের রাস্তার পাশে ময়লা ফেলে রাখে।
ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের একজন কর্মী জানান, আগে এসব বর্জ্য হাসপাতালের ভেতরেই এক পাশে ফেলা হতো। হাসপাতালে ইনসাইনেরেটর না থাকায় বর্জ্য শোধন ও বিনষ্ট না করে হাসপাতালের ভেতরে দিনের পর দিন এসব বর্জ্য জমা করে রাখা হতো। মাঝে মধ্যে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এসে সে বর্জ্য নিয়ে যেতেন। কিন্তু তারা সময়মতো এসে ময়লা না নেয়ায় এখন বর্জ্য হাসপাতালের বাইরের সড়কে ফেলা হয়। পরে সড়ক থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
এ দিকে সিটি করপোরেশন বেসরকারি এনজিও সংস্থা প্রিজম বাংলাদেশে ফাউন্ডেশনের সাথে সিটি করপোররেশনের ভেতরের সব মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রায় সব মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান এ চুক্তির অধীন এলেও ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল প্রিজমের সাথে যুক্ত হয়নি।
নাসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। যারা দায়িত্বশীল তারাও ভুল করছে। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের প্রশানিক দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তার সাথে মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে কয়েকবার কথা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাক্তার মো: ইমতিয়াজ গত বৃহস্পতিবার রাতে নয়া দিগন্তকে জানান, হাসপাতাল বর্জ্য হাসপাতাল থেকে সিটি করপোরেশনের নেয়ার কথা। তারা নিচ্ছে না বলেই বাধ্য হয় রাস্তায় ফেলা হয়। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য ডিজি বরাবর আবেদনের কথা জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এফ এম এহতেশামুল হক বলেন, গত ১১ মাস নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাসপাতালগুলোর মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। তাদের কাজ ভালো। তারা নারায়ণগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৩ শতক জমির আবেদন করেছে। সিটি মেয়র জমি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশনের সবসময় জোরালো ভূমিকা ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে কেবল সিটি করপোরেশন কিংবা প্রিজম বাংলাদেশ নয় সবার সচেতনতাই সুন্দর, নির্মল ও বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ তথা বাংলাদেশ গড়তে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল