২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যশোরে মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা

কাজ ও কর্মঘণ্টা পুরুষের সমান
-

কৃষি কাজে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়লেও অবহেলা, বৈষম্য আর নির্যাতনে ভাগ্যবিড়ম্বিত তাদের জীবন। যে জীবনে সঙ্কট নিত্যদিনের, নেই সমাধান। যশোর সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের ধান ও সবজি ক্ষেতগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। সবার কাজ ও কর্মঘণ্টা সমান। অথচ পুরুষের তুলনায় মজুরি কম পাচ্ছেন নারীরা। বছরের পর বছর চলছে এ বৈষম্য। তবুও জীবনে টিকে থাকার লড়াইয়ে নারীরা শ্রম দিয়ে যাচ্ছে পুরুষদের মতোই।
দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসারের বোঝা চাপে নারীর ওপর। পুরুষবিহীন সংসারে নারী হয়ে ওঠেন পরিবারের প্রধান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত বাংলাদেশ শ্রমশক্তিবিষয়ক এক জরিপ বলছে, এক দশকের ব্যবধানে দেশের কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১০২ শতাংশ। সেখানে পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে ২ শতাংশ। ২০০০ সালে দেশের কৃষিতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৫ লাখে। প্রতিবেদন বলছে, ১০ বছরের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ নারী কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। কৃষির বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রমবিভাজনের কারণে নারী শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। বেশির ভাগ পুরুষ পেশা পরিবর্তন করে অকৃষি কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন কিংবা গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন শহরে। কৃষি কাজে নারীর সম্পৃক্তা বাড়লেও এখনো তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার।
ধানের মৌসুমে মাঠের পর মাঠ পাকা ধান। ক্ষেতে ধান কাটায় ব্যস্ত নারী শ্রমিকরা। কাটার লোকের অভাব বলে নারীরা এ কাজে নিয়োজিত হয়। নি¤œ আয়ের পরিবারে আর্থিক টানাপড়েন কাটিয়ে উঠতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজে যোগ দেন। আমন ধানের মৌসুমে যশোরের গ্রামে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে অহরহ। আর সবজি ক্ষেতে তারা পুরুষের সাথে কাজ করছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, শুধু ধান কাটা নয়, ধানের চারা রোপণ, ধান শুকানো, ধান মাড়াই, সবজি আবাদ, সবজি তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে সম্পৃক্ত যশোরের নারীরা। পুরুষের অনুপস্থিতিতে নারীপ্রধান পরিবারের অনেক নারী প্রধানত কৃষিকাজের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুধু উৎপাদন নয়, একাধারে ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত নারীরা। কাজের সময়সীমা পুরুষের সমান অথচ মজুরি কম। কৃষিতে নারী শ্রমিকের অবদানের কোনো স্বীকৃতিও নেই।
বিজয়নগর মাঠে কাজ করছেন এক বছর আগে স্বামীকে হারানো পারুল বেগম (৪৫)। পুরো সংসারের হাল তার কাঁধেই। ৫ শতকের ভিটে জমি ছাড়া আর কিছুই সম্বল নেই। পরের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে দুই সন্তানের জননীর।
পারুল বেগম বলেন, এক বছর ধরে মাঠে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছি। বড় মেয়ে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছে। আর ছেলে হাসান এ বছর সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। ওদের জন্য আমার এত পরিশ্রম। ভোরে ঘুম থেকে উঠি। বাড়ির কাজ সেরে সকাল সাড়ে ৭টায় মাঠে চলে আসি। বেলা দেড়টা পর্যন্ত সবজি ক্ষেতে কাজ করি। প্রতিদিন মজুরি পাই ২০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকের সাথে একই জমিতে সমান কাজ করি। কিন্তু মজুরির বেলায় ১০০ টাকা কম পাই। শুধু পারুল নয় আছিয়া, জরিনা, সকিনাসহ সব নারী কম মজুরি পায়।
পাঁচ বছর ধরে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন রোজিনা বেগম। তখন মজুরি পেতেন ৫০ টাকা। এখন পান ২০০ টাকা। সময়ের ব্যবধানে তার মজুরি বেড়েছে। কিন্তু সেই মজুরিবৈষম্য এখনো আছে।
রোজিনা বেগম বলেন, অভাবের সংসার। স্বামীর উপার্জনে সংসার চলে না। তাই নিজেই মাঠের কাজে নেমে পড়েছি। খুব ভোরে সংসারের কাজ সেরে সকাল ৭টার মধ্যে পরের জমিতে (সবজি ক্ষেত) কাজে চলে আসি। বেলা দেড়টায় কাজ শেষ হয়।
একজন পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও সমমজুরি পান না তিনি। পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে ১০০ টাকা কম পান তারা।
এ প্রসঙ্গে রোজিনা বলেন, জমির মালিককে মজুরি বাড়াতে বললে, বলে ‘তোমরা বিটি (নারী) মানুষ, পুরুষ মতো বোঝা (ভারী জিনিস) বইতে পার যে, তোমাদের সমান মজুরি দেবো?’ মজুরি কম পেলেও বাড়ির পাশে জমিতে কাজ করতে পারি, এটাই আমাদের সুবিধা।
নারীদের ঘরে-বাইরে সবখানেই সামলাতে হচ্ছে। গ্রামে কৃষিশ্রমে নারীদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করা নিয়েও সমালোচনা সইতে হয়। পাশাপাশি পুরুষদেরও তীর্যক মন্তব্য সইতে হয়। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সংসারের হাল ধরছেন নারী শ্রমিকরা। কাজ করে যাচ্ছেন পুরুষদের সাথে। এ অবস্থায় অন্তত কাজের স্বীকৃতি ও মজুরির সমমান চান তারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা? কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের ২৫ দিন পর উদ্ধার যুবকের লাশ উদ্ধার ভুয়া সনদ সিন্ডিকেট : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ ঢাকার পয়োবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি

সকল