২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিগগিরই রাঘববোয়ালদের নাম প্রকাশ করা হবে

সাংবাদিকদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান
-

ক্যাসিনোকাণ্ড, অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জন মামলায় সম্প্রতি যারা গ্রেফতার হয়েছে ও যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক রাঘববোয়ালের নাম এসেছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। শিগগির তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মানিলন্ডারিং মামলায় দুদকের জিরো টলারেন্স নীতি বহাল আছে। এখন পর্যন্ত ৩৪টি মানিলন্ডারিং মামলায় শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। শুধু রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী নন, সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতি করলেও ছাড় দেয়া হবে না। কোনো প্রভাব খাটিয়ে দুদক থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। যদি আপনি দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে আপনাকে দুদকের বারান্দায় আসতেই হবে। দুর্নীতি করে কেউ ভাববেন না আপনি ছাড় পাবেন, অন্তত এই বার্তাটা আমরা দিতে চাই। দুদকের জাল থেকে কেউ তদবির করে বেরিয়ে যাবেন, তা হবে না। তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাসিনো বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ে যারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন, এমন ১৮৭ জনের নাম তাদের তালিকায় রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় বড় রুই-কাতলাও রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হয়েছে। আরো অনেকে রিমান্ডে আসবে। তাদের কাছ থেকে অন্যদের বিষয়েও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, অর্থপাচার সংক্রান্ত দুদকের দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত সাজার হার শতভাগ। ২০১৫ সালে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলা করার এখতিয়ার আরো তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সিআইডি ৬০-৭০টি মামলা করেছে। আর এনবিআর দুই-একটা মামলা করেছে। আমাদের দেশে যে মানিলন্ডারিং হয় এর বেশির ভাগ ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং। আমাদের ধারণা, ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং নিয়ে এনবিআরের বেশি মামলা করার কথা। কেউ যদি মানিলন্ডারিং মামলা না করে তাদেরকে আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি।
গত নভেম্বর পর্যন্ত দুদকে ২২ হাজার ২৩৬টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে তিন হাজার অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধানে নেয়া হয়েছে। আমরা আহ্বান করবÑ দুর্নীতির তথ্য দেন, লোকের নাম না দিলেও কোনো সমস্যা নেই। অভিযোগের মধ্যে সারবত্তা থাকলেই হয়।
তিনি বলেন, দুর্নীতি কারো ভেতরে বা বাইরে থাকে না। দুর্নীতি থাকে মাথায়। এই জন্য মাইন্ডসেট পরিবর্তন দরকার। যে কারণে সবার সম্মিলিত সহযোগিতা ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব না। ২০১৯ সালে দুদক বেশ কিছু ফাঁদের মাধ্যমে সরকারি বহু কর্মকর্তা-কর্মকচারীকে গ্রেফতার করেছে। যে কারণে ঘুষখোরদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের দুদকের গণশুনানিতে আনা হয়েছে। যারা এসব গণশুনানিতে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন হয়েছে। কিছু সমস্যা গণশুনানির মধ্যেই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।
পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার বিষয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, কেউ যদি বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে থাকে তা দেখা দুদকের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এটা দেখবে শুল্ক গোয়েন্দা। তবে তাদের কাছ থেকে যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায় যে কেউ বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে অবৈধ সম্পদের মালিক হচ্ছেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজারের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর আমদানিকারকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমরা শুধু সেটা পর্যবেক্ষণ করছি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বেসিক ব্যাংকের মামলার চার্জশিট অনুমোদন চেয়ে কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছিল। কিন্তু টাকার শেষ গন্তব্য বের করা না যাওয়ায় অনুমোদন দেয়া হয়নি। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির টাকা মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তা খতিয়ে দেখতে কয়েকটি দেশে এমএলআর (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট) পাঠানো হয়েছে। ওই সব দেশ থেকে তথ্য পাওয়া গেলে মামলাগুলোর চার্জশিটের অনুমোদন দেয়া হবে।
বেসিককাণ্ডে দায়ের হওয়া ৫৬টি মামলার কোনোটিতেই ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর নাম না আসায় দুদকের ‘ব্যর্থতায়’ গত ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফজলে নূর তাপস।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওই দিন তিনি বলেন, দুদক চেয়ারম্যান যদি বলে থাকেন বা বলতে চান বা মনে করেন, তিনি কোনো প্রভাবের কারণে এ ব্যবস্থা নেননি, তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। সে কারণে তার অবশ্যই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। আর যদি উনি মনে করেন যে, তিনি কোনো প্রভাব দ্বারা বা কারো কথায় প্রভাবিত হবেন না, তাহলে অবশ্যই জাতি মনে করে, আমরা মনে করি, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করা হোক, তাকে গ্রেফতার করা হোক, জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
সাংবাদিকরা দুদক চেয়ারম্যানের কাছে তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনি বাচ্চুর নাম কেমনে বলছেন, আপনি কে? আপনি কি ইনভেস্টিগেশন করছেন? কে কী বলছে দ্যাট ইজ নট আওয়ার কনসার্ন। এটা একটা পাবলিক ইনস্টিটিউশন। আপনি আমার পদত্যাগ চাইতে পারেন, অনেক কিছুই চাইতে পারেন, সেটা সমস্যা না। কিন্তু আপনি কে, যে প্রশ্ন করছেন বাচ্চুর নাম আসছে, কী বাচ্চুর নাম আসেনি? এটা তো আন্ডার ইনভেস্টিগেশন। বাচ্চুর নাম আসবে না আপনি জানেন কেমনে ? হু আর ইউ? ইনভেস্টিগেশন করার ম্যান্ডেট তো আমাদের, ম্যান্ডেট তো আপনার না। আপনি রিক্রিয়েট করলে তো হবে না বাচ্চুর নাম দেন বা দিয়েন না। সে যেই হোক না কেন, কারো কথা আমরা কেয়ার করি না।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে যখন চার্জশিট যাবে, তখন আপনি বলতে পারেন। এটাকে নারাজি দেয়া যায়, আরো প্রসেস আছে। আমরা যদি ভুল করি সরকার, ব্যাংক তখন নারাজি দিতে পারবে। কিন্তু আমার মনে হয় না এই ক্ষেত্রে আমরা কোনো ভুল করব। এটা জনগণ বিশেষভাবে জানে, তাই আমরা বিশেষভাবে কেয়ারফুল। যখন আমরা রিপোর্ট দেবো, এত সহজে এটা নিয়ে আপনাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেবো না।
মামলাগুলো এখনো তদন্তাধীন এবং এসব মামলার অভিযোগপত্র তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনে জমা দিয়েছিলেন জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ৫৬টি মামলা মোটামুটি একই ধরনের। এসব মামলায় যাদেরকে এফআইআরে আসামি দেখানো হয়েছিল তারা প্রায় এদিক-সেদিক করে এসেছে। ওই রিপোর্ট আমরা গ্রহণ করিনি। রিপোর্ট যখন এলো, সমস্যা হয়ে গেছে ... আমি দেখলাম যে, মানি কোথায় গেল? সেই তথ্য না দিয়ে আপনি যদি চার্জশিট কোর্টে দাখিল করেন, তাহলে এটি আমাদের জন্য বোকামি হবে।
তিনি বলেন, একজন তদন্ত কর্মকর্তা যখন সেই টাকা কোথায় গেছে তা না দিয়ে চার্জশিট দাখিল করেন তাহলে তা গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলাগুলো শতভাগ শাস্তি হওয়া উচিত। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩০-৪০ ভাগ মামলায় শাস্তি হচ্ছে না, অর্থাৎ আমাদের দুর্বলতা আছে। হয় ইনভেশটিগেশনে, না হয় প্রসিকিউশনে অথবা কোথাও কোনো মিসিং লিংক আছে। সেটি আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু থিউরিটিক্যালি দুর্নীতির প্রতিটি মামলায় শাস্তি হওয়া উচিত।
১৮০ দিনের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র বা ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার বিধান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায় মামলাতেই আমরা ১৮০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিচ্ছি, কিছু কিছু মালার ক্ষেত্রে আমরা পারি না। সেই কথা আমরা স্বীকার করি। তবে আমরা আশা করছি আমরা পারব। যেসব দেশে টাকা গিয়েছে ইতোমেধ্য এমন কয়েকটি দেশে এমএলএআর করেছি। এমএলএআর এলে পরে আমরা একটা দিকে যেতে পারব।
অনুষ্ঠানে র্যাকের সভাপতি মোর্শেদ নোমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে মারামারি, মাঠ ছেড়ে উঠে গেল সাদা-কালোরা কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল