২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নারায়ণগঞ্জে বর্ণিল ঘুড়ি উৎসব

আনন্দে শিশু যুবক বৃদ্ধ
নারায়ণগঞ্জ শহরের জিমখানা আলাউদ্দিন স্টেডিয়ামে ঘুড়ি উৎসব : নয়া দিগন্ত -

কোনোটাতে বাংলাদেশের পতাকা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আবার কোনোটাতে লক্ষী প্যাঁচা কিংবা হাতির আকৃতি। ঘুড়ি উৎসবের জন্য টানানো ডেকোরেশনের কাপড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সারি সারি ঘুড়ি। কেউ দোড়াচ্ছে নাটাই নিয়ে কেউবা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। এ যেন এক আনন্দ মাতোয়ারা সময়। বেশির ভাগই কোমলমতি শিশু। সবেমাত্র শেষ হয়েছে তাদের সমাপনী পরীক্ষা। অনেকে এসেছে বাবা মাকে সাথে করে ঘুড়ি উৎসবে। নারায়ণগঞ্জ শহরের জিমখানা আলাউদ্দিন স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার বিকেলের চিত্র এটি।
উৎসবে শিশুরা ভিড় করে দেখছিল ঘুড়ি। মাঠের আরেক পাশে কেউ কেউ ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। বাতাস না থাকায় ঘুড়ি ওড়ানো কঠিন। বিশেষ করে বড় ঘুড়ি। তবু বিশাল এক ঘুড়ি শিশুরা ধরে ‘দোলনি’ দিলো। আর সুতা ধরে দৌড় দিয়ে ঘুড়িটি আকাশে ওড়ালেন নগরীর পাইকপাড়ার মধ্যবয়সী বাদল হোসেন।
কেন ঘুড়ি উৎসবে এলেন? উত্তরে বাদল হোসেন বললেন, ‘আমাদের সময়ে বেশ বড় হয়েও আমরা ঘুড়ি উড়িয়েছি। মেয়েরা, মায়েরাও আমাদের সাথে থাকত। এটা একটা পারিবারিক বিনোদন ছিল। কিন্তু এখন জায়গা ও পরিবেশ না থাকাতে বাচ্চারা ঘুড়ি উড়াতে পারেনা। আজকে সুযোগ পেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুড়ি উড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।’
বাবা আহমদ আলী রেজা উজ্জ্বলের সাথে এসেছিল প্লে পেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মৃত্তিকা ও তার চাচাত ভাই আহমেদ জারিফ চুনকা। মৃত্তিকা জানায়, ‘ঘুড়ির অনেক ছবি এঁকেছি স্কুলে। কিন্তু ঘুড়ি কিভাবে উড়াতে হয়, নাটাই হাত দিয়ে ঘুড়াতে হয় এটা জানতাম না।’ নাটাই কিভাবে ঘোরে ভেবেছিলে? উত্তরে মৃত্তিকা বলল, ‘ভেবেছিলাম নাটাই মেশিনে ঘোরে।’
নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষিকা উম্মে লায়লা বললেন, ‘আমাদের স্কুলের বেশ কয়েকজন বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি। অনেকে ঘুড়ি-ই চিনত না। এখানে এসে চিনল।’
উৎসবে আয়োজনে ছিল ঢাকের ব্যবস্থা। ঢাকের বাজনা উৎসবকে দিয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। মাঠে বসে থেকে উৎসব উপভোগ করছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। তিনি জানান, ‘ঘুড়ি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এ কারণে পাকিস্থান আমলে ঘুড়ির বিরুদ্ধে আমরা শাসকদের অবস্থান দেখেছি। চীনে ঘুড়ি উৎসব রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। পুরো চীন একটা দিন ঘুড়ির জন্য পাগল হয়ে যায়। বিশাল আকাশের সাথে সখ্যতা হয় ঘুড়ির মাধ্যমে। মনটা বড় হয়ে যায়। আমাদের দেশেও রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘুড়ি উৎসব পালন করা প্রয়োজন।’
নারায়ণগঞ্জ ঘুড়ি উৎসব উদযাপন পর্ষদের সভাপতি জাহিদুল হক দীপু বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের কারণে নগরের মানুষ আকাশ দেখতে পায়না। দূষণে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন। ঘুড়ি আমাদের প্রকৃতির কাছে নিয়ে যায়। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখায়। এ জন্য আমাদের এ আয়োজন। সন্ধায় চমৎকার আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement