২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পার্বত্য মেলায় চোলাই মদ বিক্রি, মাঠেই সেবন

-

রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মাঠে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী পার্বত্যমেলা। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক তথ্যাদি সমতলের মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করে মেলার আয়োজক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, শতাধিক স্টলে স্থান পেয়েছে পার্বত্য এলাকার মানুষের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপকরণ। বাহারি পোশাকের পাশাপাশি রয়েছে পাহাড়ের নানা স্বাদের খাবার। বিক্রি হচ্ছে পাহাড়িদের তৈরি চোলাই মদ। মাঠেই চলছে তার সেবন। শুরুর দিনে চোলাই মদ পান করে একাধিক যুবককে মেলা মাঠে মাতলামি করতেও দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার মেলায় আগতদের গায়ে হাত তুলেছেন। এ নিয়ে মাঠে ঘটেছে ছোটখাটো অপ্রীতিকর একাধিক ঘটনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর চারজন যুবক একটি স্টল থেকে চোলাই মদ কিনে সবাই মিলে তা পান করেন। পরে মাতাল অবস্থায় তারা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে মেলার দর্শনার্থীরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তারা চিৎকার এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। পরে নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ এসে তাদের সেখান থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনা শেষ না হতেই মেলায় আগত আরো দুই যুবক মাতাল অবস্থায় শিল্পকলার প্রধান গেটের বাইরে বের হয়ে আসে। এরপর সেখানে চিৎকার দিয়ে আড্ডারত লোকদের গালাগাল করতে থাকে। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে শিল্পকলার গেটে অবস্থানরত এক নিরাপত্তাকর্মী পুলিশে খবর দেন। এ সময় মাতাল যুবকদের পরিচিতরা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ আসার আগেই তাদের নিয়ে সটকে পড়ে। এভাবে রাত ১০টায় মেলা শেষ হওয়ার পরও রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত মেলা মাঠে একাধিক মদ্যপরা মাতলামি করে। পরে মেলা মাঠে পুলিশ প্রবেশ করে তাদের বের করে দেয়। এমন ঘটনায় মেলায় আগতরা বিরক্তি প্রকাশ করে মদ বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
অপর দিকে স্টল মালিকরা বলছেন, যেহেতু এটি তাদের ঐতিহ্যের মেলা, তাই চোলাই মদও তাদের ঐতিহ্যেরই একটি অংশ। সেজন্যই তারা তা বিক্রি করছেন। আর কেউ যদি তা পান করে মাতলামি করে, তবে তা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ দায় বিক্রেতাদের নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই সমৃদ্ধ নয়, নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও তুলনাহীন। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আছে খাদ্য, ফসল, পোশাকের বৈচিত্র্যময় সম্ভার। রাজধানীবাসীর জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে পাহাড়ের বাহারি পণ্যের বিপুল সম্ভার। দেখা গেল জুমচাষের মাধ্যমে উৎপাদিত নানা ফসল ও ফল। শুধু ফল নয়, থরে থরে সাজানো পাহাড়ি অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ও পোশাক। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মেলে পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় নৃত্য-গীত ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। পাহাড়ের নানা তরতাজা ফলফলাদি, খাবার ও পোশাকে ভরাÑ সব মিলিয়ে উৎসমুখর এক পরিবেশ।
বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেল পাহাড়ি আনারস, তরমুজ, কলা, তেঁতুল, কাঁঠালসহ নানা ফলের সমাহার। আছে পাহাড়ি কাঁচা হলুদ, কফি, লাল, কালো ও সাদা বিন্নি চাল। পাহাড়ি আখ, সেই আখের তৈরি গুড়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধক বিশেষ চাড়কি! সবজির মধ্যে আছে পাহাড়ি পাকা হলুদ বেগুন, পাহাড়ি আলু, ফরাশ শিম, কুমড়া, সজিনা ডাঁটা, কলার মোচা, পাহাড়ি মুলা প্রভৃতি। স্বাদ নেয়া যাবে কলাপাতায় মোড়ানো বিভিন্ন ধানের তৈরি ‘বিনি হোগা’ নামের বিশেষ এক ধরনের পিঠা, কাঁকড়া ফ্রাইসহ হরেক রকমের খাবারের। পোশাকের মধ্যে লুঙ্গি-গামছা থেকে শুরু করে বিছানা, গায়ের চাদর, ফতুয়া, খামির বাহার রয়েছে। অলঙ্কারের মধ্যে রয়েছে হাসুলি, ঝুমকা, চোকার, নানা ধরনের মালা, ব্রেসলেট।
মেলায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসহ ঝুড়ি। এ ছাড়া আছে নানা আসবাব। বাঁশ ও বেতের তৈরি সুদৃশ্য চেয়ার, নান্দনিকতায় ভরা ফুলদানি তো আছেই। সব মিলিয়ে পাহাড়ের নানা জনগোষ্ঠীর বিপুল পণ্যের অপূর্ব সমাহারে ভরা এ মেলা।
মেলা শেষ হবে আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। পার্বত্য মেলা আয়োজনে জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, কারিতাস, পদক্ষেপ ও বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব সার্বিক সহযোগিতা করছে।


আরো সংবাদ



premium cement