২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ট্রাফিক সচেতনতা পক্ষ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রক্রিয়া মেনে দূর করা হবে সড়ক আইনের অসঙ্গতি

-

সড়ক পরিবহন আইনের অসঙ্গতি দূর করা হবে। তবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের বাইরে কিছু করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পরিবহন শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোথাও অসঙ্গতি থাকলে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সড়ক নিরাপদ রাখতে কী কী করা যায় তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করছেন। তবে আইন না মানা আমাদের সংস্কৃতি হয়ে গেছে। আইন মেনে চললেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তিনি বলেন, ট্রাফিক শৃঙ্খলা সভ্য জাতির প্রতীক। একটি প্রাণও যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ডিএমপির ‘ট্রাফিক সচেতনতামূলক পক্ষ ২০১৯’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। এর আগে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ট্রাফিক সচেতনতা পক্ষ উদ্বোধন করেন তিনি।
সড়কে চলাচলরত গাড়ির চালক, হেলপার, পথচারীসহ সাধারণ মানুষের দায়িত্ব, করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে সচেতন করতেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে শুরু হয়েছে ট্রাফিক সচেতনতা পক্ষ ২০১৯। ১৫ দিনব্যাপী এই সচেতনতা অনুষ্ঠান চলবে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তৃতায় লাইসেন্স প্রদানে সিস্টেমগত জটিলতার বিষয়ে বলেন, পরিবহন চালক ভাইদের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে একটা জটিলতা ছিল। সেটি নিয়ে বুধবার রাতে পরিবহন মালিকদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তাদের দেয়া দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে চালকদের একটা সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা তাদের লাইসেন্স ঠিক করে নেবেন।
মন্ত্রী বলেন, মহাসড়কে যারা বাস-ট্রাক চালায়, তাদের দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালাতে হয়। তাই তাদের নির্দিষ্ট সময় পর বিশ্রামের প্রয়োজন। একটা চালক আট ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর তাকে বাধ্যতামূলক বিশ্রাম নিতে হবে। মহাসড়কে বিভিন্ন জায়গায় চালকদের বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার তৈরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
ডিএমপি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক পক্ষ পালন করতে যাচ্ছে জানিয়ে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বিশ্বের উন্নত শহরগুলোতে ট্রাফিক একটি অন্যতম বড় সমস্যা। অনেক কারণে ঢাকা শহরে ট্রাফিক প্রকট আকার ধারণ করছে। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ রাস্তা থাকা দরকার। সেখানে আমাদের দেশে রাস্তা রয়েছে মাত্র ৮ ভাগ।
আইজিপি বলেন, সড়কে আইন প্রয়োগ করতে গেলে অনেকেই পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নিজের পরিচয় দেন ও বদলির হুমকি দেন। তবে আমি আশ্বস্ত করছি এর জন্য কোনো কর্মকর্তা বদলি হবেন না। তবে প্রত্যেক পুলিশকে ব্যবহার বিনয়ী হতে হবে।
তিনি বলেন, সড়কে সব স্থানে বাস থামবে লেখা না থাকলেও বাস থামার জন্য নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। কিন্তু চালকরা সেটা না মেনে বাসস্টপের আগে পরে থামেন। এতে পথচারী ও যাত্রীর সমস্যার মুখে পড়ে। এর জন্য সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে। সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বাংলাদেশের পেট্রোলপাম্পগুলো নো হেলমেট, নো ফুয়েল নীতি পালন করছে। আমরা চাই সড়কে একটি জীবনেরও যেন হানি না হয়, প্রতিটি জীবনই অমূল্য।
ঢাকা মহাগনর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে যদি চালক, যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা থাকে তবে আমাদের মামলা করার কোনো প্রয়োজন নেই। রাস্তায় সবাই আগে যেতে চায়। এই পাল্টাপাল্টির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই আইন মেনে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলে কোনো বিপদ আসবে না। নতুন আইনে কোনো চালককে একবার জরিমানা করলে তার সারা মাসের উপার্জন শেষ হয়ে যাবে। তাই আমরাও তাদেরই জরিমানা করছি, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সড়কে আইন ভঙ্গ করছে।
চালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার আপনার কারণে এমন একজন মারা গেল, যে পরিবারে দু’টি শিশু রয়েছে। তাদের খাবার দেয়ার কেউ নেই। আমরা সবকিছু আলোচনা করে সমাধান করতে পারব। কিন্তু একজন সন্তানের চোখের পানির দাম কেউ দিতে পারব না। অরাজক পরিস্থিতি আর কতদিন মানবেন? এ অরাজকতার কারণে অনেক চালক এভাবে চলে গেছেন। তাদের পরিবারেও কেউ না কেউ আছে। কেউ তাদের খোঁজ নিয়েছেন? তাদের মা, স্ত্রী-সন্তান হয়তো কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাই আসুন আমরা সবাই শৃঙ্খলা মেনে চলি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, একটি মহল নিরীহ পরিবহন শ্রমিকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। পেঁয়াজ-লবণের পর গুজব পরিবহন সেক্টরে ভর করেছে। দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে তারা।


আরো সংবাদ



premium cement