দুদকের ক্রোক করা আবজাল-রুবিনার সম্পত্তি এখনো পরিবারের নিয়ন্ত্রণে বিক্রি হয়ে গেছে ৮ জাহাজ
- ফরিদপুর সংবাদদাতা
- ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
দশ মাস পার হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মচারী আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বিশাল সম্পত্তির ভাণ্ডারের কূলকিনারা খুঁজে বের করতে পারেনি দুদক। গত আট মাস আগে তাদের সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ হয়। তবে এখনো ঢাকা ও ফরিদপুরের চারটি বাড়ির ভাড়া তুলছেন আবজালের পরিবারের সদস্যরা। এমনকি তাদের মালিকানায় থাকা ইটভাটাটিও চলছে সমানতালে। ইতোমধ্যে আবজালের মালিকানাধীন আটটি জাহাজ বিক্রি হয়ে গেছে। এসব নিয়ে আবজালের নিজ এলাকায় পরিচিতজনদের মাঝে নানা কানাঘুষা।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই মহাদুর্নীতিবাজ দম্পতি আবজাল রুবিনাকে এখনো নজরদারিতেই আনতে পারেনি দুদুক। কোথায় রয়েছে তারা এটিও নির্দিষ্ট করে হদিস করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন। সূত্র মতে, তারা দুদকের নজর এড়িয়েই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজে নিরাপদে দেশান্তর হয়েছেন। বর্তমানে এই দম্পতি নিরাপদে অবস্থান করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন নিজেদের ক্রয়কৃত আলিশান বাসভবনে। নিষেধাজ্ঞার পরেও কিভাবে তারা দেশ ছাড়লেন, সে রহস্য এখনো জানতে পারেনি দুদক।
ফরিদপুরের টেপাখোলার মতো একটি মফস্বল এলাকাতে এই দম্পতির চোখ ধাঁধানো দু’টি সুরম্য প্রাসাদে চোখ আটকে যায় যে কারোই। এসব ভবনে আছে অত্যাধুনিক সব সুবিধা। বাড়ির চার পাশেই বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের তদন্তকালেই বাড়ি দু’টি ক্রোক করা হয় এ বছরের শুরুতেই। তখন বাড়ির সামনে বড় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ক্রোকের নোটিশও টাঙিয়ে দেয়া হয়। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে দুদকের নোটিশ বোর্ড। বাড়িটি এখনো আবজালের নিয়ন্ত্রণেই আছে। সেখানে বর্তমানে বসবাস করছেন আবজালের বোন জামাই মো: হালিম শেখ।
ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা লেকপাড়ের আবজালের মালিকানাধীন বাড়িতে বসবাসকারী তার ভগ্নিপতি হালিম শেখ জানান, তারা (আবজাল-রুবিনা) একটু সমস্যায় আছেন। এ জন্য বাড়িটি দেখাশোনার জন্য আমার পরিবার নিয়ে এখানে উঠেছি। আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরে কিভাবে রয়েছেন সে বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানান তিনি।
এ ছাড়াও রাজধানীর উত্তরার ১৩ নং সেক্টরের ১১ নং রোডে ছয়তলা দুইটি বাড়িও ক্রোক করা হয়েছে আট মাস আগে। তবে এখনো এসব ভবনের ভাড়া আবজালের পকেটেই যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও গত ২০ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এই আবজাল-রুবিনা দম্পতি। বাড়ি কিনেছেন অস্ট্রেলিয়াতেও। মালয়েশিয়া ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার হদিস মিলেছে তাদের।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি এই আবজাল হোসেন রঞ্জনকে ঢাকার সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এরপর বিদেশ গমনে দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। তারপরই গাঢাকা দেন তারা। গত দশ মাস ধরে তাদের খুঁজে পাচ্ছে না দুদক।
ফরিদপুর দুদক অফিস সূত্র জানিয়েছে, তারা (আবজাল-রুবিনা) বর্তমানে কোথায় আছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তার বাড়ির কেয়ারটেকার বলছেন, ১০ জানুয়ারিই দেশ ছেড়েছেন আবজাল। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও আবজাল দম্পতি কিভাবে দেশ ছাড়ল তার ব্যাখ্যাও নেই দুদকের কাছে।
ফরিদপুরের দুদকে উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, আবজালের মামলাটি দেখাশোনা করেন ঢাকা অফিস থেকে। আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশনা আসার পরে বাড়ির সামেন সাইনবোর্ড বানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছিলাম। তবে এখন কী অবস্থা তা দ্রুত সময়ের মধ্যে দেখে দুদকের ঢাকা অফিসকে জানাব।
জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে আবজাল ও তার স্ত্রীর রুবিনার বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার আলাদা দু’টি মামলা করেছে দুদক। তবে কবে অভিযোগপত্র দেয়া হবে তা জানেন না দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে তদন্তকালে তাদের আরো সম্পত্তির সন্ধ্যান পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো সন্ধান মিলেছে বলে জানা গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা