২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আদালতের নির্দেশের তোয়াক্কা করছেন না ছাত্রলীগ নেতা

মোহাম্মদপুরে ছাগল ছিনতাই
-

আদালতের নির্দেশের তোয়াক্কা করছেন না রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি মোজাহিদ আজমী তান্না। উল্টো ওপর মহলকে ম্যানেজ করে এখনো নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন দলীয় কর্মকাণ্ডেও।
ছাগল ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলায় আলোচিত আসামি মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি তান্নাকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেও তিনি তা মানছেন না। বরং ওপর মহলের ছত্রছায়ায় থেকে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রমেও অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্ম। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এলাকায় তান্নার এ ধরনের অবাধ বিচরণের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয়দেরকে।
গত কোরবানির ঈদের আগের দিন ১১ আগস্ট ২১২টি ছাগল ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলার অন্যতম আসামি হন মোজাহিদ আজমী তান্না। কয়েক দিন পলাতক থেকে ১৯ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন পান; কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যেই হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ তান্নাকে জামিন নামঞ্জুর করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
মোহাম্মদপুর থানার একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী জানান, ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্গত মোহাম্মদপুর থানা কমিটি ঘোষণা করা হয় রাতের অন্ধকারে। এ জন্য কোনো সম্মেলন করা হয়নি। গত বছর কমিটি ঘোষণার আগের ওই সময় স্থানীয় সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ছিলেন দেশের বাইরে। তার অনুপস্থিতির সুযোগে বর্তমানে কারাবন্দী ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস বিপ্লব রাত সাড়ে ৩টায় বর্তমান কমিটি প্রকাশ করেন। অভিযোগ রয়েছে, কমিটির সভাপতি মোজাহিদ আজমী তান্না ও সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলামের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন ও উপঢৌকন নিয়ে কাউন্সিলর রাজীব তড়িঘড়ি করে কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন। বিতর্কিতরা পদ পাওয়ার অভিযোগ এনে কমিটির তিন নেতা পদত্যাগ করেন। তারা হলেন, সহসভাপতি মোহাম্মদ শাকিল ইসলাম রাব্বি, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতীক হোসেন শুভ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক অনিক। নতুন কমিটি অনুমোদন না দেয়ার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাসায় যান। তারা লিখিতভাবে এর প্রতিবাদও করেন। কমিটির বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবেÑ সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের এমন আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতিতে পদত্যাগী নেতারা পরে স্বপদে বহাল থাকেন।
এ দিকে নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান হওয়ার আগেই চাঁদাবাজি ও আর দখলদারিত্বে জড়িয়ে পড়ে সভাপতি মোজাহিদ আজমী তান্না ও সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলামের সিন্ডিকেট। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, পরের সম্পত্তি দখল, মাদক কারবারসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যার সাথে তান্নার সংশ্লিষ্টতা নেই। গত বছর কোরবানির ঈদের আগে গরু ছিনতাই করেছিলেন এ ছাত্রলীগ নেতা। আর এবার কোরবানির সময় করেন ছাগল ছিনতাই। জানা গেছে, এর আগে তান্না ও তার মায়ের নামে মানবপাচার মামলা রয়েছে (মামলা নং-৬৩, তাং-২৭-০৮-১৬ মানবপাচার আইন ১১/১২ সিএস ৮০৫ (১৭) ৫/১২/১৬ মোহাম্মদপুর থানা।
স্থানীয়রা বলছেন, তান্নার আয়ের মূল উৎস হলো মাদক কারবার। মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পভিত্তিক মাদক কারবারিদের সাথে তান্নার লেনদেন আছে। চিহ্নিত মাদক কারবারি পাচুর ভাতিজা রাহির ছেলে পলুর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া জসিম ও তন্ময়ের সাথেও তান্নার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাগল ছিনতাই মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১১ আগস্ট কোরবানি ঈদে বিক্রি করতে একদল ব্যবসায়ী যশোরের বারোবাজার পশুরহাট ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ২১২টি ছোট-বড় ছাগল ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ছাগলসহ ট্রাকটি মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের জহুরি মহল্লায় এলে তাদের আটক করে চাঁদা দাবি করেন স্থানীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। ছাগলগুলোকে ট্রাক থেকে নামিয়ে একটি ক্লাবঘরে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও তার চার সহযোগীসহ আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। এ সময় র্যাব-২-এর একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করে। এরপর ঘটনাস্থল থেকে ইয়াসির আরাফাত, জাহিদুল ইসলাম ও মো: রায়হানকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারীরা জানায়, এ ছিনতাই ঘটনায় মূল হোতা মোহাম্মদপুর থানার ছাত্রলীগ সভাপতি মোজাহিদ আজমী তান্না। এ ছাড়াও তারা আরো সাত-আটজনের নাম জানায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement