২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নেতাদের বিরুদ্ধে

বিসিআইসি সিবিএ
-

নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্ষমতায় থেকে অবৈধ কার্যক্রমের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্মচারী ইউনিয়নকে (সিবিএ)। অভিযোগ রয়েছে মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর নির্বাচন না দিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতা দখল করে ব্যপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সিবিএর কয়েকজন নেতা। নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি, কর্মচারী কোয়ার্টারে বাসা বরাদ্দসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘুষ নিয়ে এসব টাকার মালিক বনে গেছেন তারা। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হলেও এসব অবৈধ টাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। কিনেছেন একাধিক গাড়ি ও প্লট। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে শুধু বদলিই নয়, চাকরিও হারাতে হচ্ছে সাধারণ কর্মচারীদের। সিবিএ নেতাদের এসব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করতে সহায়তা করছেন বিসিআইসির কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিবিএ নেতারা।
বিসিআইসির একাধিক কর্মচারী জানান, ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিসিআইসি কর্মচারী লীগ কথিত একতরফ নির্বাচনে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করে। নির্বাচিত হওয়ার পর সভাপতি নুরুল হাদী, কার্যকরী সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, সহসভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানসহ কয়েকজন নেতা চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেন। তারা বিসিআইসির কয়েকজন কর্মকর্তার সহায়তায় লাখ লাখ টাকার নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য শুরু করেন। এরপর ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও নানা অপকৌশল অবলম্বন করতে শুরু করে। একপর্যায়ে নির্বাচন না দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দুর্নীতি চালাতে থাকে। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দেয়া হলেও বহাল তবিয়তে চালাতে থাকে অনিয়ম।
মিরাজ নামে এক কর্মচারী অভিযোগ করেন, বিসিআইসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তিনি চাকরির জন্য আবেদন করেন। একপর্যায়ে সিবিএ’র প্রথম সারির চারজন চাকরি দেয়ার কথা বলে তার পরিবারের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা ঘুষ নেয়। পরবর্তীতে মিরাজ জানতে পারেন তার চাকরি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। সেখানে কোনো টাকা লাগেনি। এরপর মিরাজ সিবিএ নেতাদের কাছে তার ছয় লাখ টাকা চাইতে গেলে ঘটে বিপত্তি। একপর্যায়ে সিবিএ নেতারা ও বিসিআইসির কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের অপকর্ম গোপন রাখার জন্য মিরাজকে বরখাস্ত করে। রুমন, আলমগীরসহ চার-পাঁচজনের চাকরি চলে গেছে।
আলমগীর নামে অপর এক কর্মচারী জানান, চাকরির নিয়ম অনুযায়ী তিনি বিসিআইসি কোয়ার্টারে একটি বাসা বরাদ্দ পান। কিন্তু সিবিএ নেতারা ওই বাসায় ওঠার জন্য তার কাছে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষের টাকা না দিলে তাকে কোয়ার্টারে উঠতে দেয়া হবে না বলে জানানো হয়। আর এ নিয়ে বেশি দৌড়ঝাঁপ করলেও চাকরি হারানোর হুমকি দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে তিনি ঘুষ দিয়ে কোয়ার্টারে ওঠেন। কিন্তু বিপদ পিছু ছাড়েনি তার। কিছু দিন পরেই তাকে বদলি করার হুমকি দেন সিবিএ নেতারা। কিছু দিন পর নেতাদের সহযোগীরা এনে বদলি না হওয়ার জন্য নেতাদের মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে আপস করতে বলে। আলমগীর এর প্রতিবাদ করলে তাকে কোয়ার্টার থেকে জোর করে নামিয়ে দিয়ে বরাখাস্ত করার হুমকি দেয়া হয়। একপর্যায়ে আলমগীর হাইকোর্ট থেকে স্টে-অর্ডার এনে পুনরায় কোয়ার্টারে ওঠেন।
সুমন নামে অপর এক কর্মচারী জানান, সিবিএ নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে বদলি করেন। এরপর নিজেরাই বদলি ঠেকানোর জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধেও নেমে আসে নানা নির্যাতন। তিনি হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার এনে নিজেকের রক্ষা করেন। তাদের অভিযোগ, সিবিএ নেতা ও কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জোগসাজশে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন বিসিআইসির শত শত কর্মচারী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিআইসি সিবিএ’র সভাপতি শেখ নুরুল হাদী প্রথমে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। পরে আবার তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। চাকরি দেয়া, বদলি বা কোয়ার্টারে দেয়ার কাজ তাদের নয়। এটা অফিসিয়ালি হয়ে থাকে। তারা সুপারিশ করতে পারেন মাত্র। এসব ক্ষেত্রে টাকা নেয়ার কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। নির্বাচন কেন দেয়া হয়নিÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অফিসিয়ালি একটা ঝামেলা ছিল, যা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement