২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বাকৃবিতে ৯ দফা দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত

হেলথ কেয়ার অভিমুখে শিক্ষার্থীদের লংমার্চ
-

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক বিদেশী শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি ও হেলথ কেয়ার সেন্টারের অব্যবস্থাপনার অভিযোগে টানা চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ৯ দফা দাবিতে গত রোববার থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন তারা। গতকাল বুধবারও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টার অভিমুখে লংমার্চ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ বৃহস্পতিবারও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে এবং দাবি বাস্তবায়নে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দাবি না মানলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
গত মঙ্গলবার রাতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৯ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টার অভিমুখে লংমার্চ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন তারা। লংমার্চটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ ভবন প্রদক্ষিণ করে বেলা ১টার দিকে হেলথ কেয়ার সেন্টারের সামনে আসে। এ সময় সেখানে হেলথ কেয়ার সেন্টারের বিভিন্ন অব্যবস্থ’াপনার বিষয়ে স্লেøাগান দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য এবং হেলথ কেয়ার সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক ডা: ফয়েজ আহমদ ও অন্যান্য চিকিৎসক উপস্থি’ত ছিলেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে প্রায় ১০-১২ হাজার লোকের জন্য একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। হেলথ কেয়ারের সেবার নি¤œমান, সব ক্ষেত্রেই কমন কিছু ওষুধ ব্যবহার, ডায়াগনোসিসের অপ্রতুল ব্যবস্থা ও বেলা ১১টার পর বন্ধ থাকা, ডেন্টিস্ট ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের অভাবসহ নানা অভিযোগ করেন তারা। এ ছাড়াও শুক্র ও শনিবার ছাত্রদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও সে দিন হেলথ কেয়ারের ডায়াগনোসিসের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স তা-ও আবার মাঝে মধ্যে কিছু ছাত্রনেতা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। সে সময় যদি কারো জরুরি দরকার পড়ে তবে তার অবস্থ’াও হারানির মতো হবে। এ বিষয়ে তাদের নৈতিকভাবে ভেবে দেখা দরকার আর প্রশাসনেরও নিয়ন্ত্রণের দাবি করছি।
এ দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পরেও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে ক্লাস চালু রাখায় ওই অনুষদে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। পরে অনুষদের ডিন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্লাস স্থগিত করেন।
এ দিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গত চার দিন থেকে ক্লাস, ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে মৃত হারানির স্মরণে শোক সভার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর ১২টার মধ্যে দাবি মেনে না নিলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মালয়েশিয়ার নাগরিক মৃত্যুবরণ করা বাকৃবির শিক্ষার্থীর নাম হারানি জানাকি রামান। তিনি বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। হারানি শুক্রবার রাত ২টায় শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় হারানি অসুস্থতা বোধ করেন। তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সেন্টারে নেয়া হয়। তবে সে সময় হেলথ কেয়ার সেন্টারে অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় অটোতে করে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টায় মৃত্যুবরণ করেন হারানি। ওই ছাত্রীর মৃত্যুর জন্য হেলথ কেয়ার সেন্টারের অব্যবস্থাপনা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিক্ষোভ জানান তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো : দায়িত্বে অবহেলার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর এবং ভেটেরিনারি অনুষদের ডিনের পদত্যাগ, হেলথ কেয়ারে অভিজ্ঞ ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স ও শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি, আন্দোলনকারীদের হয়রানি না করা, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ইউনিটের ব্যবস্থা করা।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মো: জসিমউদ্দিন খানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. লুৎফল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে আমি আন্তরিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু করতে হবে। সে লক্ষ্যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement