ছাত্রলীগ মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুত্বের চরিত্র নিয়েছে : রিজভী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
ক্ষমতায় টিকে থাকা ও দেশ বিক্রি করার জন্য আইন আদালতকে কব্জা করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারতের সাথে পানি চুক্তির চক্রান্ত তুলে ধরতে পারেন আশঙ্কায় সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গণতন্ত্র হত্যা করে বর্তমান সরকারের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা গত এক দশকে ছাত্রলীগ মনুষ্যত্ব চরিত্র হারিয়ে বন্য পশুত্বের চরিত্র নিয়েছে। সেই চরিত্রেরই সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ড। ছাত্রলীগ একেকবার একটির চেয়ে আরেকটি ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটানোর পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে সারা দেশে তাদের ভয়ঙ্কর অপকর্মের কথা। এখন গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের টর্চার সেলের কথা। এটি তো নতুন নয়। নিকট অতীতে, লগি-বৈঠা হাতুড়ি চাপাতি নিয়ে সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ যখন বর্বর আক্রমণ চালিয়েছিল, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে নির্যাতন চালিয়েছিল তখনো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল ছাত্রলীগের টর্চার সেলের কথা। সে সময় ছাত্রলীগের বর্বরতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলে আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটত না। ঠাণ্ডা মাথায় সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ছয়টি ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করতে করতে মেরে ফেলার মতো নৃশংসতা কোনো সভ্য রাষ্ট্র কল্পনাও করতে পারে না। আবরার হত্যাকাণ্ডের দায় ছাত্রলীগের অভিভাবক আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না। গতকাল রোববার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসায় ৬১৩ দিন ধরে বন্দী করে রেখেছেন তাকে। কারাগারে নেয়ার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ, দেশনেত্রী এখন হুইল চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেন না। কারো সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেন না। নিজের খাবার নিজে খেতে পারেন না। মাথার চুলও বাঁধতে পারেন না। তার পোশাকও আরেকজনকে পরিয়ে দিতে হয়। হাত-পা শক্ত হয়ে গেছে। হাত-পায়ের আঙুল ফুলে গেছে। এ অবস্থায় তিনি পিজি হাসপাতালের আট বাই দশ ফুটের ছোট্ট কক্ষে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৭৫ বছর বয়সী নেত্রীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে জীবন ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বারবার দাবি করা সত্ত্বেও দেশনেত্রীকে উন্নতমানের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। তার জরুরি ভাবে উন্নত চিকিৎসা দরকার। ব্যথার কারণে রাত্রে তার ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন।
মেজর হাফিজকে গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিকিৎসা শেষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সাথে সাথেই সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যা সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানুষের চোখকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার অপকৌশলমাত্র। মেজর (অব:) হাফিজের কণ্ঠকে স্তব্ধ করানোর জন্যই এ গ্রেফতার। চিকিৎসা শেষে অসুস্থ মেজর হাফিজ নিস্তার পেলেন না। কীর্তিমান দেশপ্রেমিক এ মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করে সরকার তার প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছে। তার গ্রেফতার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। আমরা এ মুহূর্তে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার পরও আন্দোলন চালু রাখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, আবরার ফাহাদের মতো আর কোনো অসীম সম্ভাবনাময় জীবন যাতে ঝরে না যায় সেই জন্য বুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই ১০ দফা। শিক্ষার্থীদের ১০ দফা মেনে নেয়ার ঘোষণা দিলেই সরকারের সব অপরাধ মাফ হয়ে যায় না। দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ অসম এবং অধীনতামূলক ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী চুক্তির বাতিল চায়। গত একদশকে ভারতের সাথে করা সব চুক্তির বিস্তারিত জানতে চায়। এই দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। হুমকিধমকি দিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না। এই আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষের গোলামির জিঞ্জির ছিঁড়তে স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন। ভারতের সাথে চুক্তি ও আবরার হত্যার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ও গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার এসপির অপসারণ দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত শহীদ আবরারের পরিবারকে নানা কায়দায় জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আবরারের পরিবারের সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কেউ যাতে টুঁ শব্দ না করতে পারে সে জন্য এসপি মাহবুবুল আলম হানিফের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছেন। তার কারণে কুষ্টিয়া জেলায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। তিনি বিএনপির কোনো কর্মসূচি কুষ্টিয়ায় হতে দেন না। বিএনপির পক্ষ থেকে এ মুহূর্তে কুষ্টিয়ার এসপির ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তাকে কুষ্টিয়া থেকে অপসারণের দাবি জোর দাবি জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানসহ কয়েকজন গতকাল কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন। কিন্তু লালনশাহ সেতুর ওপর উঠে তারা দেখেন, শত শত পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, তাদেরকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না, তাদেরকে শহীদ আবরারের পরিবারের সাথেও দেখা করতে দিচ্ছে না। এই দলদাস এসপিদের আশকারাতে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা সারা দেশজুড়ে নির্দয় খুন, জখম, দখল, ক্যাসিনো-জুয়াতে জড়িত হয়ে পড়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা