১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আইনি পরামর্শ নিতে আইনজীবীদের সাথে দেখা করলেন মিন্নি

-

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার জামিন করানো আইনজীবীদের সাথে দেখা করতে হাইকোর্টে এসেছেন। গতকাল রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে তার জামিনের পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণকারী সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্নার চেম্বারে আসেন তিনি।
খবর পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনও এ সময় উপস্থিত হন। সেখানেই তারা মিন্নি ও তার বাবাকে আইনি পরামর্শ দেন। এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও জামিন আবেদনের ফাইলিং আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পরে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, মিন্নির ইচ্ছা ছিল, আমারও ইচ্ছা ছিল দেখা করার। আমরাতো কেউ কাউকে চিনি না। একটা প্রেক্ষাপটে আমরা পরস্পরকে চিনতে পেরেছি। সে আমার কন্যাতুল্য। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি আমার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছি। এখন ও দেখা করতে এসেছে।
তা ছাড়া দুটো বিষয় আছে। এক, মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে এখন কী করবে না করবে তার পরামর্শ নিতে এসেছে। আমারও কৌতূহল ছিল সেখানে (আদালতে) কী দিয়েছেন না দিয়েছেন সেগুলো দেখার। তাই এখন পর্যন্ত আদালতে যেসব দাখিল করা হয়েছে তা তুলে নিয়ে এসেছে।
দুই, ও শারীরিকভাবে অসুস্থ, চিকিৎসার প্রয়োজন। কোনো কিছুই তো তার (মিন্নির) জীবনের বিনিময়ে হতে পারে না। আগে তার সুস্থ থাকতে হবে। এর সাথে তার আত্মসম্মান। তবে প্রথমত তার সুস্থতা ও জীবন, পরে অন্য কিছু।
এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেড আই খান পান্না বলেন, হত্যাকারীদের, দোষীদের শাস্তি থেকে আড়াল করার জন্যই জামিনের পরদিনই অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এখনো চার আসামি পলাতক। তাদের ধরার জন্য কোনো আগ্রহ নেই, খালি মিন্নি, মিন্নি, মিন্নি। চার্জশিটের কথাতো আগেই বলেছি, আগাগোড়াই এটা একটা মনগড়া উপন্যাস। জজ মিয়া এবং জাহালমের আরেকটা সংস্করণ।
আদালতে মিন্নির দেয়া জবানবন্দী ফাঁস হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে এ আইনজীবী বলেন, এটাতো পুলিশের কাছে ছিল। এটা বাইরে আসতে পারে না। কিন্তু আমরা দেখেছি এটা গণমাধ্যমে এসেছে। কোর্টের কাছে দেয়ার আগে এটা প্রকাশিত হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। এটা আদালত অবমাননা। মিন্নির ওই জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে আইনজীবী পান্না বলেন, আগেই করা হয়েছে। মিন্নি নিজে জেলখানা থেকে করেছে।
এ দিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমাদের ঢাকায় আসার উদ্দেশ্য হলো সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না স্যারের সাথে দেখা করা এবং তার আইনি পরামর্শ নেয়া। তা ছাড়া মিন্নি অসুস্থ। পুলিশ রিমান্ডের নামে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। ওর হাঁটুতে ও বুকে ব্যথা। আমরা ডাক্তারের পরামর্শ নেবো। ওর চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজন।
মিন্নির বাবা বলেন, ওকে জেলখানায় যে পেইন কিলার দিয়েছিল, ওইটা খাওয়ার পর ওর আরো ক্ষতি হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ীই সেটা বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন ঢাকায় ডাক্তার দেখাব।
কী ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওকে (মিন্নিকে) ব্যাপক মারধর করেছে। শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো হয়েছে। মানসিক নির্যাতন করেছে। পুলিশ লাইনসে ধরে নেয়ার পর যতক্ষণ ছিল, আমার মেয়েকে বসতে দেয়নি, দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এরপর রিমান্ডের আগে যে দেড়-দুই দিন রেখেছে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল দুই-তিনবার। বর্বর অত্যাচার করেছে। তারপর মাথায় পিস্তল ধরেছে। নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। ওর চিকিৎসা করানো একান্ত প্রয়োজন, এ জন্যই ঢাকায় আসা।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করার সময় তাকে বাঁচাতে তার স্ত্রী মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের করা মামলায় মিন্নি ছিলেন প্রধান সাক্ষী। কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর ১৬ জুলাই মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রিফাত হত্যা পরিকল্পনায় তার স্ত্রীও জড়িত ছিলেন।
বরগুনার হাকিম ও জজ আদালতে ব্যর্থ হয়ে মিন্নির আইনজীবীরা তার জামিনের জন্য হাইকোর্টে আসেন। হাইকোর্ট মিডিয়ার সাথে কথা না বলার শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করলে পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। ৩ সেপ্টেম্বর বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিনে মুক্তি পান।


আরো সংবাদ



premium cement