২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কৃষিপণ্যে মূল্যসংযোজনের হার বাড়ানোর উদ্যোগ রফতানি আয় বাড়াতে বর্ধিত হারে ঋণ বিতরণ হবে

-

কৃষিপণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রফতানি আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য কৃষিপণ্যে মূল্যসংযোজনের হার বাড়ানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিতরণ করা হবে এ খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর ফলে এক দিকে রফতানি আয় যেমন বাড়বে, তেমনি লাভবান হবেন কৃষকেরা।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ১২১টি দেশে কৃষিপণ্য রফতানি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মরিশাস, ভারত, সুইডেন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, কুয়েত, ভুটান, সিয়েরা লিওন ও সেনেগাল। এসব দেশে বর্তমানে সরাসরি তাজা শাকসবজি, তাজা ফল ইত্যাদি পণ্য রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এসব দেশে প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে এসব পণ্য এখন ওইসব দেশগুলোতে রফতানি হয়ে থাকে।
রফতানি আয় বাড়ানোর জন্য সরাসরি কৃষিপণ্যের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেমন, তাজা সবজির পরিবর্তে হিমায়িত সবজি, রান্না করা হিমায়িত সবজি, সবজির সুপ, চালের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, মুড়ি, ফলের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের তৈরি জুস ইত্যাদি। আর সরাসরি কৃষি পণ্য থেকে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য তৈরিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিল্প স্থাপন হবে। আর উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এসব শিল্প স্থাপন করতে বিতরণ হবে কৃষি ঋণ। বর্তমানে যে পরিমাণ কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয় তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিতরণ করা হবে এসব শিল্পে। বর্তমানে কৃষি খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর একটি অংশ যাবে কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে। যার একটি অংশ পরোক্ষভাবে কৃষকরা পাবে। এর মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক কৃষি ফার্মিংকে উৎসাহিত করা হবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন কৃষি পণ্যের উৎপাদন বাড়বে তেমনি মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন হবে।
এ ধরনের ফার্মিং ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের বিষয়টি তদারকি করা হবে। বর্তমানে প্রাণ, এসিআই, আগোরাসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ফার্মিং ব্যবস্থা চালু করেছে। ফলে এর আওতায় যেসব কৃষকরা রয়েছেন তারা উপকৃত হচ্ছেন। কৃষকদের স্বচ্ছল করতে চুক্তিভিত্তিক ফার্মিংকে উৎসাহিত করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়Ñ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি পণ্য রফতানি করে দেশের আয় হয়েছে ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ আয় বেড়ে দাড়ায় ৯০ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এ খাতে আযের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ডলার। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ১৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, গত জুলাই, আগস্টে বন্যার কারণে কৃষির অনেক ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, নতুন কর্মসংস্থানে গতি সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি সৃষ্টি হবে নতুন নতুন বাজার, বাড়বে রফতানি আয়। কৃষি পণ্যের চাহিদা বাড়বে। ফলে কৃষক পণ্যের নায্যমূল্যও পাবে। সব মিলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি গতিশীল হবে।


আরো সংবাদ



premium cement