শায়েস্তাগঞ্জ পৌরমেয়রের বিরুদ্ধে দুদকে কাউন্সিলরদের অভিযোগ ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম
- শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার অর্জিত অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের কারণে মেয়র মো: ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন পৌরসভার সাত কাউন্সিলর। অভিযোগকারী কাউন্সিলরেরা হলেনÑ জালাল উদ্দিন মোহন, মাসুদউজ্জামান মাসুক, খায়রুল আলম, আব্দুল জলিল, শিউলী বেগম, মো: নওয়ার আলী, মোহাম্মদ তাহির মিয়া খান। গত ৯ সেপ্টেম্বর তাদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়।
অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ দুই অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দ এক কোটি ২০ লাখ টাকা একত্র করে বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার করেন এবং এর মধ্য থেকে কিছু ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবে কোনো কাজ না করেই সব অর্থ আত্মসাৎ করেন, যা আইন ও নিয়মের পরিপন্থী।
চলমান প্রজেক্ট এমজিএসপি-১, ডব্লিউ ৪ প্রকল্পের (প্রায় ৩৭ কোটি টাকা) আওতায় পরিচালিত পুরনো প্রায় ১ হাজার ফুট ড্রেনেজের উপরি কাঠামো সাধারণ আস্তর দিয়ে দায়সারাভাবে নির্মাণ করে ঠিকাদার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন মেয়র। এমনকি এমজিএসপির চূড়ান্ত ডিজাইন মেয়র আর্থিক সুবিধা অর্জনের জন্য ন্যক্কারজনকভাবে পরিবর্তন এবং নিম্নমানের কাজ সম্পাদন করছেন। ওই প্রকল্পের মেইন্টেন্যান্স বরাদ্দের বিপুল অঙ্কের টাকা নামমাত্র কাজ করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়াও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রোড রোলার, ড্রাম ট্রাক, গার্বেজ ট্রাক, পানি সরবরাহ ট্রাকের নিয়মিত ভাড়া থেকে অর্জিত অর্থ প্রায় কোটি টাকা পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করেন।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া কর্তৃক টমটমের (অটোবাইক) বার্ষিক নম্বর প্লেট বরাদ্দের নামে রাস্তায় চলাচলরত টমটম আটক করে ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে বছরে ১৫ লাখ টাকা পৌরসভার কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স মনগড়া মতো বাড়িয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে অর্জিত টাকা পৌরসভার অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে বেশির ভাগ টাকা নিজের মতো করে আত্মসাৎ করেন। আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে যেনতেনভাবে নকশা অনুমোদনের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের অধীনে অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমিতে (হাইকোর্টে রিট মোকদ্দমাধীন) পৌর মার্কেট নামীয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেড় শতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করে তা থেকে দোকানঘর বরাদ্দের নামে সিকিউরিটি-সেলামি বাবদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ও প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি সর্বজনবিদিত এবং ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সংবাদ দেশের প্রতিটি ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।
ছালেক মিয়া পৌরমেয়র হওয়ার পর থেকে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। দাফতরিক প্রয়োজনে কোনো নাগরিক পৌরপরিষদে গেলে মেয়র ছালেক মিয়া তাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে থাকেন, যা পৌর পরিষদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করে।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করার কারণে কোনো ভালো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় কাজ নিতে আগ্রহ বোধ করেন না। ফলে ছালেক মিয়া নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে টেন্ডারকৃত কাজ দায়সারাভাবে সম্পন্ন করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন পুরনো রাস্তা সংস্কারের নামে তিনি অবৈধভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়াও অস্থায়ী ভিত্তিতে অপ্রয়োজনীয় ৩৮ জন জনবল নিয়োগ করে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এতে পৌরসভা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও পৌর পরিষদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ছালেক মিয়া পৈতৃকভাবে প্রাপ্ত মাত্র দুই শতাংশ ভূমির মালিক। তিনি মেয়র হওয়ার পর মাত্র তিন বছরের মাথায় নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর প্রায় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। মেয়রের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি কাউন্সিলরদের অপমান করেন। কোনো কোনো সময় অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করে অফিস থেকে বের করে দেন।
মেয়র ছালেক মিয়া শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে থাকেন। এ বিষয়ে আমরা কাউন্সিলরেরা প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি কঠোর ভাষায় বলেন, ‘পৌরসভার মালিক আমি, যা ইচ্ছা তা-ই করব। ইচ্ছা হলে অফিসে আসো নয়তো পদত্যাগ কর।’ উপরি উক্ত বিষয়ের আলোকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অসদাচরণের অভিযোগে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কাউন্সিলরেরা দুদক চেয়ারম্যানের বরাবরে আবেদন করেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, এমপি মো: জাহির আহমেদ, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও এমজিএসপির প্রকল্প পরিচালককে দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা