২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছাত্রলীগে ‘ভারপ্রাপ্ত’ দায়িত্ব কোন আইনে : রিজভী

-

আদালতের নির্দেশে কাউন্সিল করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কিন্তু ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে কোন আইনে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন রেখে বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগের সহযোগী থাকলেও নতুন ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার’ (আরপিও) বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আরপিও অনুযায়ী ছাত্রলীগ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৫ (১) ধারা অনুযায়ী ছাত্রলীগ তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মাত্র। ফলে আওয়ামী লীগের তরফে ছাত্রলীগকে কোনো আদেশ-নির্দেশ দেয়া বা তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারা কেবল পরামর্শ দেয়ার অধিকার রাখে। বিএনপির মতো আওয়ামী লীগও আরপিও অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াকে বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে ছাত্রলীগকে আমরা কিছু বলতে পারি না। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের শুধু ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। আরপিও আইন অনুযায়ী তারা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। ফলে ছাত্রলীগকে কোনো নির্দেশ দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। তবে আমরা পরামর্শ দিতে পারি মাত্র।
রিজভী বলেন, বাস্তবে গত শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠকে শেখ হাসিনা তাদের গঠনতন্ত্র ও আরপিও লঙ্ঘন করে জোর করে ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সেক্রেটারি রাব্বানীকে পদচ্যুত করেছেন। সে কথা স্বীকার করে পরদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করছেন। ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন সম্পন্ন করতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় আইন-কানুন সব লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছেন। এতে কি আরপিও ভঙ্গ হয় না?
তিনি বলেন, বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল। এই কাউন্সিলকে ঘিরে সারা দেশে ছাত্রদলের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। কিন্তু কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাত্র দুইদিন আগে ফ্যাসিস্ট সরকার আজ্ঞাবহ নি¤œ আদালত থেকে তড়িঘড়ি করে কাউন্সিলের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে থামিয়ে দেয়া হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না নিয়ে যেভাবে দ্রুততার সাথে রাতের অন্ধকারে আদালতের এই আদেশ বের করা হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই প্রক্রিয়ার সাথে সরকারের সর্বোচ্চ মহল জড়িত। এটা শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক রাজনীতির আরেকটি কলঙ্কজনক ও নজিরবিহীন অধ্যায়।
রিজভী জানান, অথচ ছাত্রলীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ২৯তম কাউন্সিলের সময় ছাত্রলীগের নতুন নেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ছয়জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামীম।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গত শনিবার রাতে গণভবনে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আইন-কানুন লঙ্ঘন করে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওই পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বও দিয়েছেন। এটা কোন এখতিয়ার বলে করেছেন? আদালত এ ক্ষেত্রে কি কোনো জুডিশিয়াল নোটিশ প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট আওয়ামী নেতাদের পাঠাতে পারবেন? ওবায়দুল কাদেরের কথা অনুযায়ী তারা যে আরপিও এবং দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন সেটা বৈধ আর বিএনপি সব নিয়মনীতি অনুসরণ করেও অপরাধী? আওয়ামী লীগ আরপিও এবং আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৫(১) ধারা লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রদলের কাউন্সিলে মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৪০/৪১/৪২ ধারা অনুযায়ী এই মামলাটি মেইন্টেনেবল নয়। ইতঃপূর্বে উচ্চতর আদালতের আদেশ অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের বিষয়ে আদালতের কিছু করার নেই। বিএনপির বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী শাসনেরই আরেকটি কুদৃষ্টান্ত। এখন কেন অন্ধ সেজে চোখ বন্ধ করে আছেন? আপনারা এই প্রকাশ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে জনগণের আদালতে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুল আউয়াল খান, শেখ মো: শামীম, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement