২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
২০২৫ সালের মধ্যে রফতানির উদ্যোগ

বাঁশখালী চা বাগানে বছরে ১০ লাখ কেজি উৎপাদনের টার্গেট

বাঁশখালী বেলগাঁও চা-বাগান থেকে চা-পাতা সংগ্রহ করছেন শ্রমিকেরা : নয়া দিগন্ত -

সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চা রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ চা বোর্ড গ্রহণ করেছে নানামুখী কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রতিটি বাগানে প্রতি বছর কমপক্ষে আড়াই শতাংশ করে চা বাগান বর্ধিত করা। উন্নতমানের চারা প্রদান ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করায় প্রতি বছরই চা বাগানের পরিধি ও উৎপাদন দু’টোই বাড়ছে।
সে কারণে ২০২৫ সালের আগেই বিদেশে চা রফতানি করার সম্ভবনা দেখছেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য সচিব কুল প্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নিদের্শনার আলোকে চা রফতানি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।
ইতোমধ্যে সরকারের সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমগ্র দেশের চলছে চা বাগানের পরিধি বৃদ্ধির সাথে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করার কাজ।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১৬৬টি চা বাগানে ৬০ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর গড়ে প্রতি হেক্টরে চা উৎপাদন হয় এক হাজার ৫০০ কেজি। অপর দিকে সমপরিমাণ জমিতে ইস্পাহানী, ফিনলে, ডানকানসহ বেশ কিছু বাগানে দুই হাজার ৫০০ কেজি থেকে তিন হাজার কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়। সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষমাত্র হলোÑ ৭৪ হাজার ১৪০ মিলিয়ন কেজি আর জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৩৯.০৫ মিলিয়ন। ২০১৮ সালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২ হাজার ৩৯০ মিলিয়ন কেজি, তা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ৮২ হাজার ১৩৪ মিলিয়ন কেজি। একইভাবে ২০১৭ সালে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ৬৮০ মিলিয়ন কেজি তা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৪৯ মিলিয়ন কেজি।
দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরই দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড়ে প্রতি বছর ৯ হাজার ৬৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালে।
চা চাষের পরিধি ও উৎপান বৃদ্ধির কর্মযজ্ঞে পিছিয়ে নেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র চা বাগান বাঁশখালীর চাঁদপুর বেলগাঁও বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের মোট আয়তন তিন হাজার ৪৭২.৫৩ একর। পাহাড়ি ছোট বড় টিলা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই চা বাগানে এখন মাত্র ৬৩৮ একর জায়গায় চা বাগান রয়েছে। ওই বাগানে চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার কেজি।
বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল বাসার বলেন, এই চা বাগানে পরিধি ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে গত বছর এই বাগানে উৎপাদনের টার্গেট ছিল দুই লাখ ৮০ হাজার। এই বছর তা বেড়েছে। এখন চা বাগানের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাগানের পরিধি বড় হলেও এলাকার সাথে ভূমি বিরোধ নিয়ে প্রায় ১৫টির মতো মামলা চলমান রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাগান কর্তৃপক্ষ বাগান সম্প্রসারণের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাগানের পরিধি বাড়িয়ে আগামীতে এই বাগান থেকে ১০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সরেজমিন দেখা যায়, বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপথ চান্দপুর এলাকায় এই চা বাগানের অবস্থান। এই বাগানে পুরুষ মহিলাসহ বিভিন্ন ধর্মের ও বর্ণে প্রায় ৭০০ শ্রমিক বাগান থেকে চা পাতা তোলার কাজ করছেন।
বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল বাসার বলে দেশে ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে বেলগাঁও চা বাগানের অবস্থান ষষ্ঠ।এই বাগান কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯১২ সালে ইংরেজরা ওই বাগানে প্রথম চা পাতা উৎপাদন শুরু করেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে মালিকানার অনুপস্থিতিতে অব্যবস্থাপনার সম্মুখীন হয়ে পড়ে চা বাগানটি। ক্রমান্বয়ে বাগানের অধিকাংশ জমি স্থানীয় অধিবাসীদের অবৈধ দখলে চলে যায়। পরে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত হিন্দু জমিদারদের মালিকানায় ছিল, যার নাম ছিল রায় বাহাদুর। জমিদার রায় বাহাদুরের জন্ম ছিল কুণ্ড পরিবারে। তাই এই বাগান আগে কুণ্ড চা-বাগান নামে খ্যাত ছিল।
১৯৬৫ সালে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে বাগানটি, অর্পিত চা-বাগানগুলোর চিফ কাস্টুডিয়ান চা-বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরে এনিমি প্রপার্টি ম্যানেজম্যান্ট বোর্ড (ইপিএমবি) গঠিত হলে বাগানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইপিএমবি-এর ওপর ন্যস্ত করা হয়।
১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর মিনিস্ট্রি অফ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স কর্তৃক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তৎকালীন ইপিএমবি-এর ব্যবস্থাপনাধীন চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগানটিসহ সবক’টি পরিত্যক্ত চা-বাগানগুলো পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ চা-বোর্ডের আওতায় গঠিত বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির (বিটিআইএমসি) ওপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু ইপিএমবি ও বিটিআইএমসি কোনো প্রতিষ্ঠানই চা বাগানের অস্তিত্ব বিহীন এ বেলগাঁও বাগানটির বেদখলীয় জমির দখল উদ্ধার করে চা-চাষাবাদ করতে পারেনি।
এ কারণে ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর বাগানটি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ছিল। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চা-বোর্ড ক্ষুদ্রায়তন চা-চাষ প্রকল্প চালু করার উদ্দেশ্যে বাগানটির বাস্তব দখল চা-বোর্ডের নিকট হস্তান্তরের জন্য ভূমি মন্ত্রণাালয়ের কাছে আবেদন করার মধ্য দিয়ে ওই সময়ে বাংলাদেশ চা-বোর্ড প্রায় ৮ একর জমির ওপর চা-চাষ শুরু করেন।
এরপরই এই চা-বাগানটি বাংলাদেশ চা-বোর্ড ১৯৯২ সালে রাগীব আলীর স্বত্বাধিকারী বাঁশখালী টি কেম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ২০০৩ সালে বাঁশখালী টি কোম্পানির সমূদয় শেয়ার বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ক্রয় করে কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর বিধান অনুযায়ী এ বাগানটিকে ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিমিটেড নামকরণ করা হয়। ব্র্যাক চা-বাগানটির মালিকানাস্বত্ব গ্রহণ করার পর ২০০৪ সালে বাগানের অভ্যন্তরে চা-কারখানা চালু করে এক নাগারে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চা উৎপাদন করেন। পরে ২০১৫ সালে এই বাগানটি ক্রয় করে নেন সিটি গ্রুপ। বর্তমানে সিটি গ্রুপের অধীনে এই চা বাগানে পুরোদমে চা উৎপাদন চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement