২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ছাত্রদলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল

কোনো বিতর্ক চায় না বিএনপির হাইকমান্ড

১২ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবি
-

অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে ছাত্রদলের কাউন্সিল ঘিরে কোনো ধরনের বিতর্ক চায় না বিএনপির হাইকমান্ড। যদিও কাউন্সিলের ভোটগ্রহণ ও ফল ঘোষণা নিয়ে প্রার্থী, কাউন্সিলরসহ অনেকেই নানা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেনÑ প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ এবং ফল ঘোষণা সবই হতে হবে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে। কোনোভাবেই বিবাহিত বা আওয়ামী পরিবারের সাথে জড়িত কেউ যাতে প্রার্থী হতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি কোনো ‘ভাইয়া সিন্ডিকেট’ যাতে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। কেননা এই কাউন্সিল দলের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্যও সম্মান এবং মর্যাদার। তারেক রহমান ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদেরকে সংগঠনের প্রাথমিক নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, যা তারা করতে পারেননি। ফলে একপর্যায়ে তারেক রহমানই ছাত্রদলের নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলকেই বেছে নেন, যা এখন অপেক্ষার পালা। অন্তত দলের ক্রান্তিকালে তারেক রহমানের সম্মানার্থে কাউন্সিল সুষ্ঠু হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
এ দিকে অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রদলের বহিষ্কৃত ১২ জন নেতা। তারা বলেন, আমরা দলের ক্রান্তিকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। আমরাও আসন্ন কাউন্সিল প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাই। তা ছাড়া বহিষ্কৃতদের মধ্যে দুইজন ভোটারও আছেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হলে তারা ভোট দিবেন কী করে? ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বহিষ্কৃত নেতা ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি আমাদেরকে কাউন্সিলে সহযোগিতার কথা বলেছিলেন। আমরা আশা করি তিনি অচিরেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে কাউন্সিলে সহযোগিতার পথ সুগম করে দেবেন। তার নির্দেশের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ছাত্রদলের কাউন্সিলের লক্ষ্যে আবার তফসিল মোতাবেক গত ১৭ ও ১৮ আগস্ট দুই দিনে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের বিপরীতে ১১০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে ১৯ ও ২০ আগস্ট উভয় পদের বিপরীতে মোট ৭৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ২৭ জন সভাপতি এবং ৪৯ জন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। এখন চলছে প্রার্থী যাচাই বাছাই, যা ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৭ আগস্ট। ২৮ আগস্ট প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ এবং ২৯ এবং ৩০ আগস্ট প্রার্থীদের আপিল নিষ্পত্তি করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৩১ আগস্ট। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ সেপ্টেম্বর। প্রচারণা চালানো যাবে ৩ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ করা হবে ১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রার্থীর আবেদনে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। অনেক প্রার্থীই সব শর্ত পূরণ করতে পারেননি। ফলে তাদের আবেদন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
সম্ভাব্য প্রার্থী ও কাউন্সিলররা যা বলছেন : সভাপতি পদপ্রার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, আমি প্রত্যাশা করি, ছাত্রদলের কাউন্সিলে মেধাবী কাউন্সিলরদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে যোগ্য, ত্যাগী, মেধাবী ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে; যেই নেতৃত্ব সবাইকে সাথে নিয়ে দেশনেত্রী তথা গণতন্ত্রের দ্রুত মুক্তি, তারুণ্যের অহঙ্কার তারেক রহমানের বীরোচিত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিত করণসহ একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিটি ইতিবাচক কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। আরেক প্রার্থী সাজিদ হাসান বাবু মনে করেন, দেশনায়ক তারেক রহমান কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক, যুগোপযোগী এবং তৃণমূলের প্রাণের দাবি। কাউন্সিলকে ঘিরে ছাত্রদল আগের চেয়ে গতিশীল, উজ্জীবিত। কাউন্সিলের যাবতীয় মনিটরিং করছেন তারেক রহমান। তাই ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে ফল ঘোষণা স্বচ্ছ এবং অবাধ হবে বলে আমি মনে করি। কাউন্সিলররা ভোটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব বের করবে এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আরেক সভাপতি পদপ্রার্থী মামুন খান বলেন, আমি বিশ্বাস করি একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কাউন্সিল হবে এবং সেভাবেই ফল ঘোষণা হবে। মজলুম নেতাকর্মীদের ভোট নিয়ে কেউ প্রভাবিত করতে পারবে না। শুধু রাজপথের ত্যাগী ও সাহসীদের দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংগঠন পুনর্গঠন করে সর্বাগ্রে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন শুরু করব ইনশাআল্লাহ! অপর সভাপতি প্রার্থী মো: এরশাদ খান বলেন, কাউন্সিলকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যে চর্চা শুরু হয়েছে, তা জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব রাখবে বলে বিশ্বাস করি। কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। কাউন্সিল অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলেই আমার বিশ^াস।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো: তানজিল হাসান বলেন, আমি বিশ্বাস করি কোনো প্রকার বিতর্ক ছাড়া কাউন্সিলের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফল প্রকাশিত হবে। আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে যেন কোনো পক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো প্রভাব বিস্তার করে তারুণ্যের অহঙ্কার আমাদের অভিভাবক তারেক রহমানকে বিতর্কে না ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকবে। কাউন্সিলররাই যোগ্য নেতাদের হাতে সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে দিক। আরেক সেক্রেটারি প্রার্থী নাদিয়া পাঠান পাপন বলেন, আমি বিশ্বাস করি বিএনপির প্রাণ হচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা। তারাই আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে রাজপথে থেকেই সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আসছি। কাউন্সিলরদের রায় হবে চূড়ান্ত রায়। অপর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আমিনুর রহমান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আদর্শের সৈনিকের হাতেই আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের যোগ্য নেতৃত্ব আসবে বলে প্রত্যাশা করছি। আশা করি কাউন্সিলররা শতভাগ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করবেন। পাশাপাশি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে ভোটদান এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে বলে মনে করি।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও কাউন্সিলর শাহাদাৎ হোসাইন রিপন মনে করেন, আমরা চাই যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসুক। তারেক রহমানের যে স্বপ্ন সেটা যেন বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু ইলেকশনের পর সিলেকশন হলে আমরা আশাহত হবো। নীলফামারী জেলার সভাপতি সালেকীন আহমেদ সজীব বলেন, কোনোমতেই যেন বিবাহিত আর অছাত্ররা ছাত্রদলের নেতৃত্বে না আসে। এ জন্য ভালোভাবে আবেদন যাচাই করতে হবে। সিন্ডিকেট যেন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সভাপতি মো: সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা চাই তৃণমূলের মতের প্রতিফলন ঘটুক। তরুণ নেতৃত্ব নির্বাচনে তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক। গাইবান্ধা জেলার সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার জীম বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিল সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত অবাধ ও সুষ্ঠু হোক। ছাত্রদল যেন গতি ফিরে পায়। বিবাহিতরা যেন না আসে।
বিএনপির দুইজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলকে বিতর্কিত করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাফ কথা ছাত্রদলের নেতৃত্বের প্রশ্নে ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তি পছন্দ ও সে অনুযায়ী নেতা বানিয়ে দেয়াটা তিনি পছন্দ করেন না। ‘নো চুজ অ্যান্ড পিক’। সোজা কথা ইলেকশন। শত ফুল ফুটতে দেয়ার নীতি। তৃণমূলের পছন্দে নির্বাচিত নেতৃত্ব আসবে, কোনো নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হবে না। ভোটের প্রক্রিয়া অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে। আবার শুরুটা বিএনপিতে ছাত্রদল দিয়েই। ছাত্ররাইতো পথ দেখায়, অতীতেও দেখিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেখাবে। যারাই কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে তাদের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত তারেক রহমানই নিবেন।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। কারা বিবাহিত বা অবিবাহিত সেসব এলাকাভিত্তিক যাচাই করা হচ্ছে। শিক্ষাগত সনদও যাচাই করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ফরম সুচারুরূপে নিরীক্ষা হচ্ছে। ভোটগ্রহণ শেষে ওই দিনই ফল ঘোষণা হবে। কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল