রংপুরে প্রসূতির পেটে সুই রেখে সেলাই

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আফরোজা নামে প্রসূতি এক নারীর পেটে সুই রেখেই সেলাই দেয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এ কথা বলতে গিয়ে উল্টো মারধরের শিকার হয়েছেন ওই নারী। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনিচ্ছাকৃত ভুলে এ ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রংপুর মহানগরীর আদর্শপাড়ার অটোরিকশাচালক তানজিদ হোসেনের স্ত্রী আফরোজা বেগম প্রসব ব্যথা নিয়ে গত ১৯ আগস্ট রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ডেলিভারি ইউনিটের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় নরমাল ডেলিভারির সময় সমস্যা হওয়ায় ছোট অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি সম্পন্ন করা হয়। এ সময় সেলাই করতে গিয়ে ক্ষতস্থানে সুই রেখেই সেলাই করে দেয়া হয়। পরে তাকে আবারো গাইনি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।
ভুক্তভোগী আফরোজা বেগম জানান, ডেলিভারির অপারেশনের সময় আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি চিৎকার করেছি। নার্স আমাকে দুইবার চড়থাপ্পড় মেরেছে। তারপর নার্স-আয়ারা তিন চারবার সেলাই দিয়েছে আর খুলেছে। সেলাই করার পর প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারেই বিষয়টি আমি জানালে সেখানে কর্তব্যরত এক নার্স আমাকে থাপ্পড় মারেন। আমি ব্যথায় দিশেহারা হয়ে পড়লেও চিকিৎসক-নার্সরা আমাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার মেডিক্যালের বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করলে দেখা যায়, অপারেশনের স্থানে একটি সুই রয়ে গেছে।
আফরোজার আত্মীয় আরজিনা বেগম জানান, অপারেশন থিয়েটারে শিশুকে বের করার সময় জরায়ুর নিচের অংশটুকু বেশি কেটে ফেলেন নার্স ও আয়ারা। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ওটি থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নেয়ার আগে ব্যথা বেড়ে গেলে নার্সদের জানানো হয়। কিন্তু সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীকে চড়থাপ্পড় মারেন। তারপরও আমরা অনেকবার নার্স ও আয়াদের বলেছি, প্রসূতির ব্যথা হচ্ছে। তারা গুরুত্ব দেননি। পরে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করলে সুই রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
এ দিকে আফরোজার নানীশাশুড়ি রেজিয়া বেগম জানান, অপারেশন থিয়েটারে কোনো চিকিৎসক ছিল না। নার্স দিয়ে অপারেশন করা হয়েছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শারমিন সুলতানা লাকী জানান, ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে হয়েছে। আমরা আফরোজার সুচিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। শিগগিরই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।