২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তদন্ত ৩ মাসে শেষ করার নির্দেশ

রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের অনিয়ম
-

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো ও নিয়ন্ত্রণকারী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে গঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কমিটির কার্যক্রমে ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, ১৪ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল না করলে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো: খুরশীদ আলম খান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ জালাল উদ্দিন।
আদেশের পর আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ১০ মাসেও তদন্ত শেষ হয়নি। এত দিনেও প্রতিবেদন না দেয়ায় কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তদন্তের গতি নিয়ে। আমরা কমিটিকে কার্যপরিধি ঠিক করে দিতে আদালতে আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচটি কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
পাঁচটি কার্যপরিধি হলো- ১. সিন্ডিকেট চালু ছিল ১০ মার্চ ২০১৭ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত। এই দুই বছর সময়ে কোনো কোনো রিক্রটিং এজেন্সি শ্রমিক পাঠাতে পেরেছে এ তথ্য দিতে হবে। এতে যদি দেখা যায় এই ১০ এজেন্সি ছাড়া কেউ না পেরে থাকে তাহলে তাতেই প্রমাণ হয়ে যায় তাদের একটা সিন্ডিকেট ছিল।
২. প্রতিজন শ্রমিক থেকে কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে মাইগ্রেশন খরচ বাবদ। সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা করে। তারপর এটাকে একটু বাড়িয়ে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করে সার্ভিস চার্জ নিতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে প্রত্যেক শ্রমিক থেকে চার লাখ করে নেয়া হয়েছে। এ দুই বছরে বিদেশে গেছে দুই লাখ ৮৫ হাজার শ্রমিক। এটা তদন্ত করে দেখতে হবে তাদের কাছ থেকে কত টাকা নেয়া হয়েছে।
৩. মালয়েশিয়া থেকে যখন সিদ্ধান্ত এলো ১০ জনের মাধ্যমেই শ্রমিক পাঠাতে হবে তখন এখান থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। এই প্রতিবাদের সম্মুখীন হয়ে ১১ নম্বর বিবাদি নুর আলী, যিনি এই সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড, তিনি সরকারের কাছে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, এক একজন সিন্ডিকেটে আরো ২০টি করে রিক্রুটিং এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত তাতে ২০০ জন হয়ে যায়। এই ২০০ জনের মাধ্যমে আমরা পাঠাব। ধীরে ধীরে সবাইকে তাতে যুক্ত করব। তখন সরকার এটাকে অনুমোদন করে কিন্তু আমরা এটাকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি সবাই মিলেমিশে পাঠিয়েছিল নাকি ১০ জনই পাঠিয়েছে।
৪. মালয়েশিয়া বা বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে হলে শ্রমিকদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়। মালয়েশিয়ার জন্য ২৬টি মেডিক্যাল সেন্টার খোলা হয়েছিল। এই ২৬টার মধ্যে ৮টা ছিল সিন্ডিকেটের মধ্যে। দেখা গেছে যেখানে মেডিক্যাল পরীক্ষার ফি ছিল ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। সেখানে নেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা করে। পাঠানো হয়েছে তিন লাখের মতো শ্রমিক। আর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে পাঁচ লাখের মতো। যারা যেতে পারেননি তাদের মেডিক্যাল পরীক্ষার টাকা ফেরতও দেয়া হয়নি। এই মেডিক্যাল সেন্টারের মাধ্যমে কত টাকা আদায় হয়েছে সেটাও খুঁজে দেখতে হবে।
৫. জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইসরাফিল আলমসহ চারজন সংসদ সদস্য মালেয়শিয়া গিয়েছিলেন সিন্ডিকেটের বিষয়ে তদন্ত করতে। বেসরকারি চ্যানেল এটিএন বাংলার একটা ওপেন টকশোতে তিনি বলেছিলেন, তদন্ত করা উচিত। শ্রমিকদের থেকে যে টাকা নেয়া হয়েছে সেটা পাচার হয়েছে কি না সেটাও তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
গত ২৬ জুন মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোয় জড়িত ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট ও তাদের অনিয়ম তদন্ত করে ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশের পর প্রতিবেদন দাখিল না করে সময় চায় কমিটি। গত ফেব্রুয়ারিতে সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে কমিটি গঠন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব।


আরো সংবাদ



premium cement