১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না তেঁতুলিয়ার চা চাষিরা পাতার মূল্য নিয়ে কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেট

তেঁতুলিয়ার রওশনপুরে চা বাগান থেকে পাতা তুলছেন নারী শ্রমিকরা : নয়া দিগন্ত -

২০০০ সালের আগে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার অর্থনীতি নির্ভরশীল ছিল আখ, আনারস ও পাথরের ওপর। এর পর থেকে তেঁতুলিয়ায় ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু হলে অর্থনীতিতে যুক্ত হয় নতুন এক মাইলফলক। চা আবাদ করে নগদ অর্থ পাওয়ায় গ্রামের সাধারণ কৃষকরা ধান ও সবজি চাষের জমি, বাঁশঝাড়, বনজ ও ফলদ বাগানকে পাল্টে ফেলে চা বাগানে। তখন চাষিরা বাগানের কাঁচা চা পাতা কারখানার মালিকদের কাছে ২৫ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। বিগত ১৯ বছরে পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়ায় চা চাষির সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।
নদার্ন বাংলাদেশ প্রকল্প, বাংলাদেশ চা বোর্ড, পঞ্চগড়ের অধীনে সাত হাজার ৪৪৫ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। তন্মধ্যে লালমনিরহাটে ৭০ একর, নীলফামারীতে ৩৫ একর, দিনাজপুরে ১৫ একর, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪২ একর এবং পঞ্চগড়ে সাত হাজার ২৪৩ একর জমিতে চা-চাষ হয়েছে। পঞ্চগড়ে ২৫ একর জমির ঊর্ধ্বে নিবন্ধিত বড় চা বাগানের সংখ্যা সাতটি এবং ২৫ একরের নিচে নিবন্ধিত চা বাগান চাষির সংখ্যা ৬৯৯ জন। এর বাইরে অনিবন্ধিত চা চাষির সংখ্যা প্রায় চার হাজার।
এসব বাগানের উৎপাদিত চা পাতা কেনার জন্য চা বোর্ডের অনুমোদিত কারখানার সংখ্যা ২৫টি। এর মধ্যে ১৫টিতে নিয়মিত চা উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। বাকি ১০টির মধ্যে তেঁতুলিয়ার ভজনপুরে গ্রিন এনার্জি টি কারখানা ও লালমনিরহাটের সোমা অ্যান্ড সোমা কারখানাটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়েছে। অন্য আটটি কারখানা এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি।
কিন্তু উৎপাদনে যাওয়া ১৫টি চা কারখানার মালিকরা নানা অজুহাতে চা পাতার দাম কমাতে থাকে। এ নিয়ে চা চাষিরা একাধিকবার আন্দোলনও করে। তখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা পাতা ক্রয়ের নির্ধারিত মূল্য প্রতি কেজি ২৪.৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চা কারখানার মালিক, চা বাগান মালিক ও জেলা প্রশাসন সুধীজনের সমন্বয়ে আলোচনা সভায় চারপাতা যুক্ত চায়ের কুঁড়ি কাঁচা পাতার মূল্য ১৬.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে পাতার মান ভালো না হলে ১০ শতাংশ হারে কর্তন করে চাষিদের মূল্য পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কারখানার মালিকরা ৩৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ কর্তন করে ১২.৫০ টাকা দরে মূল্য পরিশোধ করে। এ ক্ষেত্রে চাষিদের ভাউচারে কর্তনের হিসাব ও প্রতি কেজির মূল্য উল্লেখ না করে শুধুমাত্র মোট টাকা পরিশোধ করে। এ ব্যাপারে কোনো চাষি অজুহাত দিলে তার পাতা কারখানার মালিকরা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। ফলে চা চাষিরা লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছে।
মাগুরা গ্রামের চা চাষি আব্দুল লতিফ জানান, এক একর জমিতে চা আবাদ করেছি। প্রথম দিকে কাঁচা চা পাতার ভালো দাম পেলেও বর্তমানে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ চা কারখানার মালিকদের অজুহাতের কারণে ভারত থেকে অন্যান্য পণ্যের সাথে চা আমদানি করায় নিলাম মার্কেটে দেশীয় চা পাতার দাম নেই। এ ছাড়া অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে মাইকিং করে চা পাতা কেনা বন্ধ রেখেছে। আর যেসব কারখানা চা পাতা কিনছে তাদের কাছে পাতা দিতে হলে দালালের মাধ্যমে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ঘুষ দিয়ে একাধিক দিন ঘুরে চা পাতা দেয়ার সিরিয়াল নিতে হয়।
সাহেবজোত গ্রামের চা চাষি নজরুল ইসলাম জানান, প্রথম দিকে ভালোভাবে চা পাতা বিক্রি করতে পারলেও বর্তমানে দিনের পর দিন ঘুরেও কারখানায় পাতা দিতে পারছি না। ফলে প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আবার চা পাতা সঠিক সময়ে কাটা না হলে বাগান নষ্ট হয়ে যাবে।
দর্জিপাড়া গ্রামের চা চাষি আব্দুল মজিদ জানান, আমি আট বিঘা জমিতে চা চাষ করেছি। কিন্তু বাগানের চা পাতা বিক্রি করতে পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে বাগান উপড়ে ফেলে দিতে হবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, চা চাষিদের অবস্থা অনেকটা তৎকালীন নীল চাষিদের মতো হয়ে গেছে। কারণ চা কারখানার মালিকদের একতরফা সিদ্ধান্তে কাঁচা পাতা যে মূল্যে কিনছে তা দিয়ে বাগানের সার, কীটনাশক ও পাতা তোলার কামলা খরচও হয় না। আমি এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের সাথেও কথা বলেছি যেন বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলে চা বাগান মালিকদের কাঁচা পাতার সঠিক মূল্য নির্ধারণের ব্যবস্থা করেন।
নদার্ন বাংলাদেশ প্রকল্প, বাংলাদেশ চা বোর্ড, পঞ্চগড়ের প্রকল্প পরিচালক, ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, চা চাষিরা যেন পাতার ন্যায্যমূল্য পায় সেই জন্য চা বোর্ডের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কারখানার মালিক ও বাগান মালিকদের নিয়ে আলোচনা সভা করে কাঁচা পাতার মূল্য ১৬.৫০ টাকা এবং ভেজা পাতা হলে ১০ শতাংশ কমে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কারখানার মালিকরা সেই শর্ত এখনো বাস্তবায়ন করেনি। কারখানার মালিকদের অজুহাত আমাদের চা চাষিরা যে পরিমাপের পাতা সরবরাহ করছে তা অকশন মার্কেটে দাম পাওয়া যায় না মর্মে চা পাতা কিনতে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। তবে এই সমস্যা অল্প দিনের মধ্যে কেটে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement
সম্ভাবনা সত্ত্বেও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে ঘাটতির কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী লাল গালিচা, ডুবুরি আর একলা সন্ন্যাসী রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে কিশোরীর মৃত্যু জামালপুরে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অটোরিকশা চুরির মামলা কেএনএফ সদস্যদের আদালতে উপস্থাপন, ৫২ জনের রিমান্ড মঞ্জুর ৬ জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ, মর্টার শেলের শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত এলাকা হামলার ব্যাপারে ইসরাইল নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে : নেতানিয়াহু ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সকল