২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশে প্রতিদিন ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে

-

দেশে দৈনিক ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। অপর দিকে বিশ্বে বছরে তিন লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যায় একই কারণে। বেশির ভাগই এক থেকে চার বছরের শিশু। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এ শিশুদের বেশির ভাগ নি¤œ আয়ের দেশগুলোর। তবে উন্নত বিশ্বে সুইমিং পুলেও ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে পানিতে ডুবে যে শিশুরা মারা যায় এদের ৮০ শতাংশ মারা যায় পুকুরে অথবা ছোট ডোবায় এবং ৮০ শতাংশ মারা যায় বাড়ি থেকে মাত্র ২০ মিটার (প্রায় ৪২৩ ফুট) দূরের পুকুর অথবা ডোবায়। ছোট পরিবারের চেয়ে বড় পরিবারের শিশুরা বেশি মারা যাচ্ছে পানিতে ডুবে। বড় পরিবারে শিশুদের দেখে-শুনে রাখার মানুষের অভাব। গবেষণা বলছে, দেশে ৬০ শতাংশ শিশু মারা যায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে।
আন্তর্জাতিক ডুবে যাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. আমিনুর রহমান জানিয়েছেন, পানিতে ডুবে বাংলাদেশে বছরে ১৪ হাজার ছয় শ’ শিশু মারা যায়। এ ছাড়া আরো সাত হাজারসহ মোট ২১ হাজার ছয় শ’ মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে দেশে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি সম্মেলনকক্ষে ‘চ্যালেঞ্জিং দ্য ড্রাউনিং এপিডেমিক ইন বাংলাদেশ- ওয়ে ফরোওয়ার্ড’ শীর্ষক অবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভায় ড. আমিনুর রহমান জানান, উচ্চ আয়ের দেশের চেয়ে নি¤œ আয়ের দেশের শিশুরা পানিতে ডুবে বেশি মারা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ‘বিশ্বব্যাপী তিন লাখ ২০ হাজার মানুষ ডুবে মারা যাচ্ছে। এর ৯০ শতাংশ নি¤œ আয়ের দেশের। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতি লাখে ৯.৮ জন এভাবে মারা যাচ্ছে। ইউরোপে প্রতি লাখে মারা যায় ৬.৬ জন, আমেরিকায় প্রতি লাখে ৫.৩ জন, আফ্রিকা মহাদেশে প্রতি লাখে মারা যায় ১০.৮ জন।
‘উচ্চ আয়ের চেয়ে নি¤œ আয়ের দেশে কেন পানিতে ডুবে বেশি মারা যাচ্ছে’ এ প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, ‘এসব দেশে পাইপে সরবরাহকৃত পানির প্রাপ্তি কম অথবা একেবারেই নেই। দৈনন্দিন কাজে প্রাকৃতিক পানি ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল এসব মানুষ, শিশুদের তত্ত্বাবধানের অভাব, পানি রয়েছে এমন উৎসের চার দিকে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা বাঁধ নেই। যেসব পরিবারের শিশুরা মারা যাচ্ছে এসব পরিবার পানিতেই ভ্রমণ করে অথবা পানির কাছেই বসবাস করে। আবার পানিবাহিত দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে এসব এলাকায়। সর্বশেষ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘উদ্ধার তৎপরতা খুবই কম এবং উদ্ধারে সাহায্য করার আগেই মারা যাওয়ার কারণে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।’
পানিতে ডুবে মৃত্যু ঠেকাতে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) আঁচল ও পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় ‘ভাসা’ নামক দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই দু’টি প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব অঞ্চলে পানি বেশি সেখানে বিশেষ তত্ত্বাবধানে শিশুদের সাঁতার শেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে কাজ করছে ‘সিসেফ লাইফগার্ড সার্ভিস’। কক্সবাজারে সৈকতে সিসেফ লাইফগার্ড সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা সমুদ্রে ডুবে গেলে মানুষকে উদ্ধার করে থাকে। কক্সবাজারের তিনটি সৈকতে ২৪ জন লাইফ গার্ড রয়েছেন। এ পর্যন্ত তারা ৩০০ জনকে উদ্ধার করেছে সমুদ্র থেকে।
ড. আমিনুর রহমান জানিয়েছেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে দেশব্যাপী আরেকটি জরিপ চালানো হবে পানিতে ডুবে কতজন মারা গেছে। এর আগে ২০১৬ সালে সর্বশেষ জরিপ পরিচালনা করা হয় এ বিষয়ে।

 


আরো সংবাদ



premium cement