২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঢাবির ভিসি হতে চাইনি ৩ কারণে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসির মতো সম্মানজনক পদে মনোনয়ন এবং পীড়াপীড়ির পরেও সে পদ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের (কারাস) মিলনায়তনে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে আত্মজীবনীমূলক বক্তৃতায় এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ কথা বলেন। সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাকে যখন ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার প্রস্তাব করা হয় তখন তা আমি তিন কারণে ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ আমি এরশাদের আমলে ভিসি হতে পারি হ ১৩ পৃ: ৬-এর কলামে না। আমার ছাত্র জিয়াউদ্দীন বাবুল তখন ডাকসুর সেক্রেটারি ছিল, সে আমার জন্য সুপারিশ করার কথা বলে। তখন আমি তাকে বলি তুমি যদি আমার ছাত্র হয়ে থাকো তাহলে এ কাজ করো না। ডিজিএফআই ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসাররা বলেন, আমার নাম সবার ওপরে দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়ত. আমি যখন ডিন ছিলাম তখন উপলব্ধি হয়েছে প্রশাসন আমার কাজ নয়। কাছাকাছি সময়ের ভিসি ফজলুল হালিম চৌধুরীর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, নানা ধরনের প্রমোশন, নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে সবাই আসত। এজন্য তিনি সকালে হাঁটতে বের হতে পারতেন না। তিনি বলেন, হাঁটতে বের হলে সবাই সুপারিশ নিয়ে এসে ভিড় জমিয়ে দেবে, যার কারণে তিনি বাসায় থাকতেন। সে থেকে তখন আমার মনে হতো ভিসি হলে আমি এই বিচ্ছিন্নতা মেনে নিতে পারব না।
তৃতীয়ত. আমার ছাত্রছাত্রীরা হলে গাদাগাদি করে থাকবে, তাদের জন্য আবাসন নিশ্চিত না করে আমি ভিসির বড় বাড়িতে থাকব সেটা মেনে নিতে পারব না।
তিনি বললেন, আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে আমি লেকচারার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বিয়ে করেছি। এ সময় উপস্থিত শ্রোতারাও হাস্যরসে ঢলে পড়েন। পরে তিনি সামরিক বাহিনীতে থাকা তার এক বন্ধুকে দিয়ে ভিসি না করার জন্য সুপারিশ নিয়ে পাঠান।
বুদ্ধিজীবী হত্যার সময় বেঁচে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ঢাবির এমিরিটাস অধ্যাপক বলেন, বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় আমারও নাম ছিল। কিন্তু ঠিকানা ছিল না। ১৪ ডিসেম্বর আমিও মারা যেতে পারতাম। তিনি বলেন, সারাজীবন একটি অশুভ আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। এই অশুভর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন তার সাথে আমি সব সময় থাকতে চেয়েছি। তাই বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত রেখেছি।
নিজের লেখালেখি সম্পর্কে প্রবীণ এই সাহিত্যিক বলেন, লেখা আমার ঘাড়ের ওপর চাপে। ন্যায়-অন্যায়বোধ আমাকে লিখতে বাধ্য করে। পরে অবশ্য লেখা জীবিকার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এ সময় সাহিত্যবোধ ও জীবনবোধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওসমানী উদ্যান রক্ষার আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এজন্য অনেকেই আমাকে পরিবেশবাদী আখ্যা দিয়েছিলেন, তবে আমি তা বলি না। নিজেকে মনে করি আমি একজন অধিকার সংরক্ষণবাদী।
এ সময় সামাজিকতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সামাজিকতা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পূর্ণ হয় না। আমার সাংস্কৃতিক জীবন আমাকে সামাজিক হতে সহায়তা করেছে। এ সময় তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেন।
এর আগে জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। দেশের বিভিন্ন স্তরের জ্ঞানীগুণীরা এতে উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement