২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
নয়াবাজারে ব্লেড পার্টি বেপরোয়া

ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার

-

রাজধানীর নয়াবাজার এলাকায় ব্লেড পার্টি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা। মালামাল বোঝাই বিভিন্ন পরিবহন চালকের গলায় ব্লেড ধরে মালামাল লুট করে নিচ্ছে। এসব সিন্ডিকেটের মূল হোতা চোর জাহাঙ্গীর ওরফে ভাঙ্গারি। তার কাছ থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও থানা পুলিশ নিয়মিত বখরা নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, নয়াবাজার, বাবুবাজার ব্রিজের উপরে ও নিচে কয়েক মাস দরে ব্লেড পার্টি বেপরোয়া ওয়ে উঠেছে। এ পার্টির মূল হোতা বংশাল থানা এলাকার সামসাবাদের ভাঙ্গারি জাহাঙ্গীর ওরফে চোর জাহাঙ্গীর বলে জানা গেছে। তার নেতৃত্বে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন সদস্য পণ্য বোঝাই বিভিন্ন পথরিবহন চালকের গলায় ব্লেড ধরে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। দলে বাবু, একরামুল, জনি, রাসেল, গলাকাটা মিলন, রাসেল, মালেক, সাইদুল, সালাম, খাইরুল ও আবুলসহ ২০ থেকে ৩০ জন সদস্য রয়েছে। তারা মালামাল বোঝাই বিভিন্ন লরি, ট্রাক, মিনি ট্রাক, পিকাভভ্যান, কাভার্ডভ্যান, পায়েচালিত ভ্যান ও রিকশা চালকদের গলায় ব্লেড ধরে সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে। প্রথমে তারা তাঁতীবাজার মোড় থেকে টার্গেট করে। পণ্য বোঝাই পরিবহনটি নয়াবাজার জিন্দাবাহার পার্ক কিংবা অত্র এলাকায় রাখতে কিংবা দিনে পণ্য বোঝাই পরিবহন ঢোকামাত্র কৌশলে থামানো হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চালকের গলায় ব্লেড ধরা হয়। জীবনের ভয়ে সর্বস্ব দিতে বাধ্য হন চালক ও পরিবহনে থাকা মালের মালিক কিংবা স্টাফরা। চলতি মাসের ১৩ জুন বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে মিটফোর্ড এলাকার কামরুজ্জামান পলাশ নামের এক ব্যবসায়ীর ১৬ বস্তা তামার তার নিয়ে নেয় ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা। ব্যবসায়ী পলাশ জানান, পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট ও নৌবাহিনীর মালামাল টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করেন তিনি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পল্লী বিদ্যুৎ-৩ থেকে তামার তার ট্রাকে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় নয়াবাজার কবরস্থানের সামনে মিনি ট্রাক থামিয়ে চালকের গলায় ব্লেড ধরে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ১৬ বস্তা তামার তার নিয়ে যায় তারা। যার মূল্য লক্ষাধিক টাকা। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রভাবশালীদের জানালে চিহ্নিত চোর জাহাঙ্গীর পাঁচ বস্তা মাল ফেরত দেয়। বাকি মালামাল ফেরত দিবে না বলে জানিয়ে দেয় জাহাঙ্গীর। ওই মালামালের মূল্যও প্রায় এক লাখ টাকা। তিনি বলেন, মিটফোর্ড, চকবাজার, নয়াবাজার, বাবুবাজার ও তাঁতীবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা ব্লেড পার্টির কাছে জিম্মি।
এরা এলাকার ছিনতাই ও পকেটমারের সাথেও জড়িত বলে জানা যায়। মিটফোর্ডের একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্পট থেকে ভ্যানগাড়ি দিয়ে মিটফোর্ডে আনা হয় বৈধ ওষুধ। কোথাও কোনো ঝামেলা হয় না। নয়াবাজার এলাকায় ভ্যানগাড়ি ঢুকলেই ব্লেড পার্টির কবলে পড়তে হয়। কখনো কখনো নগদ টাকা দিয়ে তাদের হাত থেকে বাঁচতে হয়। আবার কখনো ভ্যান গাড়িতে থাকা মালামাল জোর করে নিয়ে যায়। পরে ওষুধ ব্যবসায়ী নেতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় কিছু মালামাল উদ্ধার হলেও বাকিটা পাওয়া যায় না। আলিফ লাম ওষুধ মার্কেটের ব্যবসায়ী শহিদ জানান, নয়াবাজার কবরস্থান কিংবা বাবুবাজার ব্রিজের আশপাশে ওইসব চোরদের অবাধ বিচরণ। ওরা চিহ্নিত ব্লেড পার্টি। পুলিশ ঘটনা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে মিরপুর থেকে ভ্যানগাড়িতে করে প্রায় ২ লাখ টাকার ওষুধ আনা হয়। বাবুবাজার ব্রিজের নিচে ব্লেড পার্টি ভ্যানচালককে গলায় ও পিঠে ব্লেড ঠেকায়। পরে দ্রুত কিছু মালামাল নিয়ে সটকে পড়ে। তবে পাশেই নয়া সড়ক ফাঁড়ি পুলিশ বসা ছিল। তাদের সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কিছু বলেনি।
চোর জাহাঙ্গীর ওরফে ভাঙ্গারির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এক সময় ব্লেড পার্টির সরদার ছিলেন। তবে এখন আর এসব অপকর্ম করেন না তিনি। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে তামার তারের বস্তা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওইসব ছিনিয়ে নেয়া কিছু মালামাল উদ্ধার করে দিয়েছে সে। তাতে যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে অপরাধী সে।’


আরো সংবাদ



premium cement