২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ওজোপাডিকোর অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে খুলনায় গ্রাহকদের মানববন্ধন

-

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন গ্রাহকরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় গ্রাহকরা ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শফিক উদ্দিনকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা উল্লেখ করে তার অপসারণসহ এ পর্যন্ত সংঘটিত ওজোপাডিকোর সকল প্রকার দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি করেন গ্রাহকরা। প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটি, খুলনার ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, প্রি পেইড মিটার নামক যন্ত্রদানব খুলনার গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বিপুল অঙ্কের অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওজোপাডিকো। প্রি পেইড মিটার ক্রয়ের সাথেও যেমন রয়েছে দুর্নীতি, তেমনি খুলনায় স্থাপিত প্রি পেইড মিটার কোম্পানির বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। এছাড়া বক্তারা খুলনায় এসেম্বল হওয়া প্রি পেইড মিটার জনগণের জন্য আর একটি ভোগান্তির কারণ হবে বলেও মনে করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, প্রি পেইড মিটারে কি পরিমাণ জালিয়াতি হচ্ছে তার প্রমাণ মিলবে শুধুমাত্র মিটার ভাড়া আদায় সংক্রান্ত বিষয়টিকে ঘিরেই। কেননা কতদিন পর্যন্ত মিটার ভাড়া নেয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে কোথাও বলা নেই। তাছাড়া পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির পর গত ৩০ এপ্রিল থেকে ১% রিবেট দেয়া হলেও আগের দুই বছরের আদায়কৃত দু শ’ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিলের দুই কোটি টাকার রিবেটের কী হবে সেটিও স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। এতে খুলনার প্রি পেইড মিটার গ্রাহকরা শঙ্কিত।
মানববন্ধনে আসা গ্রাহকরা ক্ষোভের সাথে বলেন, ডিজিটাল এ মিটারে ব্যাংকে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে রিচার্জ করতে হচ্ছে। ১ হাজার টাকা রিচার্জ করলে ৮৫২ দশমিক ৩৮ টাকার বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বাকি টাকা থেকে মিটার ভাড়া হিসেবে ৪০ টাকা, ডিমান্ড চার্জ ৬০ টাকাসহ ৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে ৪৭ দশমিক ৬২ টাকা কেটে নেয়া হয়। ডিজিটাল মিটারে অতিরিক্ত বিল এলে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সমাধান পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সমস্যা আরো জটিল। আতঙ্কে থাকতে হয়। আগে প্রতি মাসে ৭ শ’ টাকা বিল দিতে হতো। এখন প্রি পেমেন্ট পদ্ধতিতে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করে মাসে ১ হাজার ২ শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৩ শ’ টাকা বিল দিতে হচ্ছে।
ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ওজোপাডিকোতে দুর্নীতির ১২টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রতিনিয়ত ওজোপাডিকোর দুর্নীতির যাতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকরা। যা দেখার বা শোনার কেউ নেই। যেভাবে ওজোপাডিকোতে দুর্নীতি-লুটপাট শুরু হয়েছে তাতে অচিরেই ওজোপাডিকো একটি দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে বলেও বক্তারা আশঙ্কা করেন। এজন্য এখনই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বক্তারা প্রি পেইড নামক যন্ত্রণা থেকে খুলনাবাসীকে রক্ষার দাবি জানান।
সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও খুলনা বিএমএ’র সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন। সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল নূর মোহাম্মদ ও শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন, যুগ্ম সদস্য সচিব শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, সাংস্কৃতিক কর্মী শাহীন জামাল পন, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মালিক সরোয়ার হোসেন, বাসদ নেতা জনার্দ্দন দত্ত নান্টু, নারীনেত্রী শামীমা সুলতানা শীলু, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, সিরাজুদ্দিন সেন্টু প্রমুখ।
সংগ্রাম কমিটি ঘোষিত অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল বুধবার খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ২০ জুন বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ২০ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত কেসিসি মেয়র ও সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওজোপাডিকোর প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিটি গঠন।


আরো সংবাদ



premium cement