২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডিআইজি মিজান কি দুদকের চেয়ে শক্তিশালী : প্রশ্ন আপিল বিভাগের

-

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালককে ঘুষ দেয়ার দায়ে পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ। আদালত দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ডিআইজি মিজানকে এখনো গ্রেফতার করছেন না কেন? সে কি দুদকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী?’
হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের শুনানিকালে গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো: খুরশীদ আলম খান। জেসমিন ইসলামের জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের শুনানিকালে আপিল বিভাগ খুরশীদ আলম খানের কাছে ডিআইজি মিজান সম্পর্কে এমন প্রশ্ন করেন। এ সময় জবাবে দুদক আইনজীবী আপিল বিভাগকে জানান, ‘ওই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। তদন্ত চলছে।’ পরে আদালত বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার বিষয়টি অ্যালার্মিং’।
আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, হলমার্কের চেয়ারপারসন জেসমিন ইসলামকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে আমরা লিভ টু আপিল করেছিলাম। আমরা মানে দুর্নীতি দমন কমিশন। শুনানির সময় আপিল বিভাগ হাইকোর্টর রায় বাতিল করে দিলেন। জামিন বাতিল করে তাকে চার সপ্তাহের মধ্যে নি¤œ আদালতে সারেন্ডার করার জন্য নির্দেশ দিলেন।
তিনি বলেন, ‘এ মামলার শুনানিকালে আদালত আমাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন। আদালত বলেন- আপনাদের (দুদক) একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এটা তো অ্যালার্মিং দেশের জন্য। আমি বলেছি, এর বিরুদ্ধে পিউনেটিভ অ্যাকশন নেয়া হয়েছে।’ আদালত বলেন, ‘কিসের পিউনেটিভ অ্যাকশন নিয়েছেন? আপনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর তথ্য পাচারের জন্য অ্যাকশন নিয়েছেন, ঘুষের কোনো অ্যালিগেশন আপনি নেননি, অ্যাকশন নেননি। কোনো কিছু করেননি।’ আমি বলেছি, ‘ঘুষের জন্য নিতে হলে আমাকে একটু অনুসন্ধান করতে হবে। অনুসন্ধান করে আমাকে এফআইআর দায়ের করতে হবে। আইনের বাইরে তো আমি কোনো কিছু করতে পারব না।’
আদালত বলেন, ডিআইজি মিজান কি দুদকের চেয়ে বড়? তাকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। তাকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না? এই মামলায় তাকে কেন আপনি (দুদক) অ্যারেস্ট করছেন না?’ আমি বলেছি, ‘দুদকের কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আর যে মামলায় ডিআইজি মিজানুর রহমানের অ্যারেস্ট হওয়ার কথা সে মামলাতে অলরেডি চার্জশিট মেমো অব এভিডেন্স দেয়া হয়েছে এবং যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাথে সাথে দুদক একটা অ্যাকশন নিয়েছে। এই তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। নতুন একজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে, সে নতুন করে কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত আইনানুগভাবে গুরুত্ব¡সহকারে দুদক দেখছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
প্রসঙ্গত, গত বছর নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয় পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানকে। এরপর তার বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত চলাকালেই প্রাপ্ত তথ্য অভিযুক্তের কাছে চালান করে দিয়ে আপসরফার মাধ্যমে দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন তিনি। ডিআইজি মিজান নিজেই এমন অভিযোগ করেছেন দুদকের পরিচালকের বিরুদ্ধে।
দুদকের কাছে ডিআইজি মিজানের করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের সাথে তার চুক্তি ছিল টাকার বিনিময়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন। তবে টাকা নিয়েও শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধেই প্রতিবেদন জমা দেন বাছির। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অবৈধ লেনদেনের এই ঘটনা দুদকের কাছে ফাঁস করেন ডিআইজি মিজানুর রহমান।
ডিআইজি মিজানের অভিযোগকে আমলে নিয়ে এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুদক। যদিও দুদক পরিচালক এনামুল বাছির অভিযোগটি অস্বীকার করেন। এরপর গত ৯ জুন বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এনামুল বাছিরকে সাময়িক সাসপেন্ড করে দুদক।


আরো সংবাদ



premium cement