২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মরক্কোর রতœ দ্বিতীয় হাসান মসজিদ

-

দ্বিতীয় হাসান মসজিদের অবস্থান মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায়। আটলান্টিক মহাসাগরের পানির ওপর অবস্থিত এ মসজিদকে শুধু মরক্কোর রতœ বললে ভুল হবে। এটি মসজিদ মাত্র নয়। অবিশ্বাস্য সুন্দর এ স্থাপনার আয়োজন এক কথায় বিস্ময়কর। এ মসজিদে প্রবেশের পর পর্যটকদের কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে থাকতে হয় এর বিস্ময়কর আয়োজন দেখে। এর স্থাপত্যশৈলী, নান্দনিকতা, অলঙ্করণ, মূল্যবান দ্রব্যাদি আর রঙের ব্যবহার, সমন্বয়ের কাছে পৃথিবীর বড় বড় তারকা হোটেল আর রাজ প্রাসাদের সৌন্দর্যও ম্লান। মসজিদের সাহানে পা রাখা মাত্র মনে হবে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সবচেয়ে সুন্দর কোনো প্রাসাদ বা দুর্গ। ঘোড়ার পায়ের ক্ষুরাকৃতির খিলানে মার্বেল পাথর, গ্রাইনাইট আর রঙের যে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে এ অনুভূতি জাগে দর্শকদের মনে। আর মসজিদের ভেতরের মেঝে, খিলন, খুঁটি, সিলিং, লাইটিং, মূল্যবান দ্রব্যাদির অলঙ্করণ, লাইটিংয়ের সাজসজ্জা মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো। চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বর্ণনা করার মতো নয়। মসজিদের স্থাপত্যশৈলী আরব, আন্দালুসয়া, ইরান আর মরিস স্থাপত্যের সমন্বয় করা হয়েছে। মসজিদে নেই মানবসৃষ্ট কোনো পরিবেশ বা শব্দদূষণ। তবে আছে সদা মহাসাগরের জলরাশির বিশাল ঢেউয়ের রোমাঞ্চকর আর শিহরণ জাগানো গর্জন। মসজিদের সুরক্ষা দেয়ালে তিন থেকে চার ফুট উঁচু ঢেউ সদা আছড়ে পড়ে। মসজিদের প্রায় সব দিকে বিশাল চত্বর আর সাহানের পাশে বসে উপভোগ করা যায় মহাসাগরের নীল জলরাশির গর্জন আর আছড়ে পড়ার দৃশ্য।
মরক্কোর পঞ্চম রাজা মোহাম্মদের স্মরণে রাজা হাসান-২ এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মরক্কোর অন্যতম উচ্চাবিলাসী প্রকল্প ছিল এ মসজিদ নির্মাণ কার্যক্রম। ১০ হাজার শিল্পী ও কারিগর অংশ নেন এ মসজিদের নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টির কাজে। এর মধ্যে মরক্কোর বাছাই করা ছয় হাজার কারিগর পাঁচ বছর ধরে অনবরত কাজ করেছেন, মেঝে, দেয়াল, খুঁটি এবং সিলিংয়ে মোজাইক, টাইলস ও মার্বেলসহ মূল্যবান পদার্থ বসানো ও অলঙ্করণের জন্য। এর নির্মাণ খরচ পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। রাজা হাসানের ইচ্ছা ছিল মক্কার পর এটি হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ। কিন্তু মধ্য আয়ের দেশ মরক্কোয় এত বিলাসবহুল মসজিদ নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়ায় মরক্কো সরকার রাজা হাসানের ইচ্ছা থেকে পিছিয়ে আসে। এ মসজিদ নির্মাণ করা হয় জনগণের দানে। এক কোটি ২০ লাখ মানুষ এ মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করেন। তাদের প্রত্যেককেই রসিদ এবং সনদ প্রদান করা হয়। মরক্কোর সবচেয়ে মূল্যবান গ্রানাইট, প্লাস্টার, মার্বেল এবং কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে এ মসজিদে। এ ছাড়া ইতালি থেকেও গ্রাইনাইট সংগ্রহ করা হয়েছে।
আলজেরিয়ার গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স নির্মাণের আগ পর্যন্ত এটিই ছিল আফ্রিকার সবচেয়ে বড় মসজিদ। মুসল্লি ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে উইকিপিডিয়ার তালিকা অনুযায়ী এটি এখন পৃথিবীর ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। এর মিনার ছিল এক সময় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু। ৬৯০ ফিট উঁচু মিনার ৬০ তলা ভবনের সমান উঁচু। মিনারের চূড়ায় লেসার বসানো আছে। লেসারের আলো রাতে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ২০ মাইল পর্যন্ত মক্কার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আটলান্টিক মহাসাগরের পানির ওপর অবস্থিত এ মসজিদের এক প্রান্ত স্থলভাগের সাথে যুক্ত। মসজিদের ভেতর এবং বাইর মিলিয়ে এক লাখ পাঁচ হাজার মুসল্লি এক সাথে সালাত আদায় করতে পারেন। ১৯৯৩ সালে মসজিদের নির্মাণ সম্পন্ন হয়।
শব্দ এবং পরিবেশদূষণ মুক্ত এবং সাগরের নির্মল বাতাস মুসল্লিদের মনে ভিন্ন এক অনুভূতি সৃষ্টি করে। মসজিদে রয়েছে ইসলামিক লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাম্মামখানা, মাদরাসা, ঝর্ণা, বিশ্রামাগার। মসজিদ ঘিরে থাকা বাগান একটি জনপ্রিয় পারিবারিক পিকনিক স্পট। সব মিলিয়ে এ মসজিদ কাসাব্লাঙ্কার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এবং মরক্কোর অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার পর্যটক লাইন ধরে প্রবেশ করেন এ মসজিদ দেখার জন্য। মসজিদের বিশাল খোলা সাহানে সব সময় ছোটাছুটি করে ধনী-গরিব সব পরিবারের শিশুরা।


আরো সংবাদ



premium cement