২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নাগরিক নিরাপত্তা জোটের উদ্বেগ মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় দায়িত্ব এড়াচ্ছে সরকার

-

দেশে বর্তমানে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নাগরিক নিরাপত্তা জোট। এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার যেখানে জনগণের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রদানে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ, সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা জনগণের মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘আইনের শাসন, নিরাপত্তা, জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার’ দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের ব্যানারে বিশিষ্ট জনেরা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড. হামিদা হোসেন, খুশী কবির, শীপা হাফিজা, শাহীন আনাম, জিয়া তারিক আলী, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা, জাকির হোসেন, শরীফ জামিলসহ নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শামসুল হুদা।
এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে প্রতিনিয়ত নানা অন্যায়, অবিচার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, মতপ্রকাশ ও মুক্তচিন্তার অধিকারের ওপর আঘাত, নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্রে আইনের শাসন ও জবাবদিহির অভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরো বেশি সঙ্কটাপন্ন করে তুলছে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে না পারলে কোনো উন্নয়নই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাজে অন্যায়, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান। সর্বোপরি জনগণের মধ্যকার নিরাপত্তাহীনতা একটি ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তারা বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে বাংলাদেশ এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়বে। তারা প্রাতিষ্ঠানিক দলীয়করণ বন্ধেও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এতে আরো বলা হয়, এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১৮ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৫৪টি আর শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৩৪টি। ১৪৪ শিশু খুন হয়েছে। অন্তত ছয়জনের গুম হওয়ার অভিযোগ আছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাই নাগরিকের নিরাপত্তায় প্রয়োজন বৃহৎ ঐক্য।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন; কিন্তু তা হচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। কোনো জবাবদিহি নেই। দলীয়করণ বন্ধ করে সব প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজাতে হবে।
নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, সারা দেশে ভীতির সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। সবাই মিলে কর্মসূচি নিতে হবে।
মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক থাকা দরকার; কিন্তু সেটি তো দেখা যাচ্ছে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার, এমনকি আদালতের নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement