২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নওগাঁর অনন্য স্বাদের আম নাকফজলি

-

নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের স্বাদে গুণে অনন্য আম হিসেবে পরিচিত নাকফজলি আগামী ১ জুন থেকে গাছ থেকে নামানো শুরু হবে। উপজেলার আমচাষিরা বর্তমানে গাছ থেকে এ আম নামানোর জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তবে রোজার মাসে আমের চাহিদা কম থাকায় দাম কমের আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে নাকফজলি আমের গুণাগুণ বিচার বিশ্লেষণ করে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে রফতানির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ধামইরহাট উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আম বাগান। অধিকাংশ বাগানে রয়েছে নাকফজলি আম। এ ছাড়া রয়েছে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, আমরুপালি জাতের আম গাছ রয়েছে। এ উপজেলার কৃষকরা কমবেশী প্রত্যেকের বাড়িতে দুই-তিনটি করে নাকফজলি আম গাছ লাগিছে। এক কথায় প্রতি কৃষকের ঘরে ঘরে এ আম এখন চাষ হচ্ছে।
একটি নাকফজলি আমের ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত। পাতলা চামড়া এবং সরু আঁটি যা অন্যান্য আমের চেয়ে আলাদা। মিষ্টতার দিক দিয়ে ল্যাংড়া ও আমরুপালির সমতুল্য। এ আমে কোনো আঁশ না থাকায় খেতে খুবই সুস্বাদু। আম পাকার পরও শক্তভাব থাকায় সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব। নাকফজলি আম বাংলাদেশে শুধু নওগাঁ জেলার ধামইরহাট ও বদলগাছি উপজেলায় চাষ হচ্ছে। তবে বর্তমানে পার্শ্ববতী পতœীতলা ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার এ আমের বিস্তার ঘটেছে। অনেকে মনে করেন এ আমের নিচের দিকে নাকের মতো চ্যাপ্টা হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে নাকফজলি। আম চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, নাকফজলি আম ১৯৬৭ সালে আফতাব হোসেন ভাণ্ডারীর মাধ্যমে এ উপজেলার বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে বন বিভাগে এমএলএসএস পদে কর্মরত আফতাব হোসেন ভাণ্ডারী জানান, তার দাদার বাড়ি একই জেলার বদলগাছি উপজেলার ভাণ্ডারপুর গ্রামে। ভাণ্ডারপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার খুকুমণি লাহেরীর কাছ থেকে তার দাদা এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। জমিদার খুকুমণি লাহেরী ভারতের কলকতা থেকে এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে আফতাব হোসেন ভাণ্ডারী জোড় কলমের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর আগে ধামইরহাট উপজেলায় এ আমের বিস্তার ঘটান। বর্তমানে উপজেলার মণিপুর, রামরামপুর, আঙ্গরত, চকময়রাম, হরীতকীডাঙ্গা, হাটনগর, পিড়লডাঙ্গা, শিবরামপুর, মইশড়, আগ্রাদ্বিগুণ, আলমপুর ও জয়জয়পুর এলাকায় ছোটবড় প্রচুর পরিমাণে নাকফজলি আমের বাগান রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার সর্বত্র কম-বেশি এ আমের চাষ হচ্ছে। জোড় কলমের মাধ্যমে এ আমের চারা রোপণ করার দু-এক বছরের মধ্যে গাছে মুকুল আসে। গাছের বয়স তিন-চার বছর হলে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় চার-পাঁচ মণ আম পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে কৃষকপর্যায়ে এ আম প্রতি কেজি প্রথমে ৩৫-৪০ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়। পরবর্তীতে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম বিক্রি হয়। ধামইরহাট পৌরসভার অন্তর্গত নওয়াপাড়া গ্রামের আমচাষি আব্দুল কাদের বলেন, আগে এ আমের চাহিদা না থাকলেও এখন আম পাকার আগে বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন আম কেনার জন্য অগ্রিম বায়না দিচ্ছেন। রামরামপুর গ্রামের আমচাষি দেওয়ান আব্দুল হান্নান বলেন, রোগবালাই কম থাকায় এ আম চাষ করা সহজ ও লাভজনক। যারা একবার এ আমের স্বাদ গ্রহণ করেছেন পরবর্তীতে আবারও সংগ্রহের জন্য কৃষকদের নিকট ধরনা দিচ্ছেন। এ জেলার বাইরে এ আমের তেমন কোনো পরিচিতি না থাকায় দেশবাসী এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে না। তবে বর্তমানে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অধিবাসীরা যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছেন তাদের মাধ্যমে এ আমের স্বাদ গুণ অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা গ্রহণ করছেন। বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এ আমের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধামইরহাটে আমের আড়তগুলো থেকে ব্যাপক পরিমাণে এ আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেলিম রেজা বলেন, নাকফজলি আম সব দিক থেকে অনন্য। এ আমকে ব্র্যান্ডিং আম হিসেবে পরিচিতির জন্য ইতোমধ্যে বিলবোর্ডসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এলাকার চাহিদা মেটানোর পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আম সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশেও রফতানির ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১ জুন থেকে গাছ থেকে নাকফজলি আম পাড়া শুরু হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement