২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্কুলছাত্রী বর্ষার আত্মহত্যা রাজশাহীতে ওসি প্রত্যাহার

-

স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও নিপীড়নের মামলা নিতে গড়িমসি করার অভিযোগে রাজশাহীর মোহনপুর থানার ওসি আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো: শহিদুল্লাহ।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম সাংবাদিকদের জানান, ওসি আবুল হোসেনকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ১৬ মে নিজ ঘরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মোহনপুরের বাকশিমইল উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী ও উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল বর্ষাকে অপহরণের পর নিপীড়ন করে স্থানীয় বখাটে মুকুল নামের এক ভ্যানচালক। বর্ষার পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর ওসি আবুল হোসেন অভিযুক্ত মুকুলের পক্ষ নেন।
তারা জানান, বর্ষাকে নির্যাতনের পর মামলা দায়ের করতে গেলে তার পরিবারকে হেনস্থা করেন ওসি আবুল হোসেন। চার দিন ধরে মামলা না নিয়ে নানাভাবে টালবাহানা করতে থাকেন তিনি। বর্ষার বাবা তখন ওসিকে বলেন, মামলা না নিলে বলে দেন আর আসব না। ওই সময় তিনি এসপির সাথে দেখা করবেন বলে ওসিকে জানান। ওসি তখন পিটিয়ে বর্ষার বাবার দাঁত ভেঙে দিতে চান। অবশেষে এসপি মো: শহিদুল্লাহর হস্তক্ষেপে ঘটনার চার দিন পর ২৪ এপ্রিল মামলা নেন ওসি।
এ মামলায় স্থানীয় বখাটে মুকুল ও বর্ষার সহপাঠী সোনিয়াসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। কিন্তু পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় মুকুলের পরিবার বর্ষাকে নানা ধরনের কটূক্তি করতে থাকে এবং অপবাদ দিতে থাকে। এই অপমানে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে বর্ষা। এরপর থানায় আরেকটি মামলা করেন তার বাবা। এই মামলাতেও মুকুলসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে মুকুলসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এদিকে, ১৬ মে সন্ধ্যায় রাজশাহীর মোহনপুরে নিজ বাড়ির কক্ষ থেকে সুমাইয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট রেখে যায় সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। সেখানে লেখা ছিলÑ
‘প্রিয় মা-বাবা,
প্রথমেই তোমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। অনেক আদর, অনেক ভালোবাসা। কিন্তু একটা মেয়ের কাছে তার মান-সম্মানটাই সবচেয়ে বড়। আমি আমার লজ্জার কথা সবাইকে বলতে বলতে নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি।
প্রতিদিন পরপুরুষের কাছে এসব বলতে বলতে আমি আর পারছি না। অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো আমার মান-সম্মান ফেরত পাবো না। আমাকে ক্ষমা করো।’
রাজশাহী জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দু’টি মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সাথে মামলা যথাসময়ে না নেয়ায় মোহনপুর থানার ওসি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয় ও এসপির কার্যালয় থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement