২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আদলে জাবিতে হয়রানিমূলক শৃঙ্খলাবিধি

-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাবিষয়ক অধ্যাদেশে নতুন ধারা সংযোজন করেছে বিশ্ববিদালয় সিন্ডিকেট। নতুন ধারা সংযুক্ত করে বিশ্ববিদালয়ের ছাত্রছাত্রী, সংবাদকর্মী, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের ডিজিটাল মাধ্যমে মতপ্রকাশের পরিসর সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তার পরিবেশ আরো সঙ্কুচিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নতুন বিধিকে নিবর্তনমূলক ও বাকস্বাধীনতায় অবৈধ হস্তক্ষেপ দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে হইচই সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় এ অধ্যাদেশ হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। অধ্যাদেশের ৫-এর (ঞ) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন ছাত্র/ছাত্রী অসত্য এবং তথ্য বিকৃত করে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনও সংবাদ বা প্রতিবেদন স্থানীয়/জাতীয়/আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ/প্রচার করা বা উক্ত কাজে সহযোগিতা করতে পারবে না।’
৫-এর (থ) নম্বর ধারায় আরো বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষক,কর্মকর্তা, কর্মচারীর উদ্দেশে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনও অশ্লীল বার্তা বা অসৌজন্যমূলক বার্তা প্রেরণ অথবা উত্ত্যক্ত করবে না।’
অধ্যাদেশে শাস্তির বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়, “ধারা দু’টির ব্যত্যয় ঘটলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখে ‘অসদাচরণ’ বলে গণ্য হবে। এ জন্য লঘু শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, সতর্কীকরণ এবং গুরু শাস্তি হিসেবে আজীবন বহিষ্কার, বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনও পরিমাণ জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।”
শৃঙ্খলাবিধির নতুন সংযোজন সম্পর্কে জাবি সিনেট সদস্য ও বাংলাদেশ সুুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলাসংক্রান্ত অধ্যাদেশের ছাত্র ছাত্রীদের আচরণ বিধি অংশে উল্লেখিত ৫(ঞ) এবং ৫(থ) উপধারা দুটি বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯ (চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা) এবং অনুচ্ছেদ ৪০ (পেশা-বৃত্তির স্বাধীনতা) এর পরিপন্থী। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার বিকাশ এবং লালন-পালনের যথাযথ স্থান। এই উপধারা দুটি ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কার তৈরি করবে। ক্যাম্পাসে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সংকোচিত করবে এবং সাংবাদিকরা নিগ্রহের স্বীকার হতে পারেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি যেখানে ঢালাওভাবে উপধারায় উল্লিখিত কর্মকাণ্ড সংগঠিত হতে পারে। উপরন্তু অসত্য, তথ্য বিকৃতি, অশালীন বার্তা বা অসৌজন্যতামূলক বার্তার কোনো সংজ্ঞা কিংবা ব্যাখ্যা না থাকার কারণে উপধারা দু’টি নিপীড়নমূলক হয়ে উঠতে পারে এবং উঠবে এটাই স্বাভাবিক।
আইন অনুযায়ী অধ্যাদেশের বিষয়বস্তু অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে সিন্ডিকেটে আশার কথা। স্বাভাবিক চিন্তায় এরকম উপধারা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল প্রেরণ করতে পারেন না। সিন্ডিকেটেরও বিষয়টি দেখে ফেরত পাঠানো উচিত ছিল। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে এরকম প্রস্তাবনা এসে থাকলে, তারাও এর দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আপাতদৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কিছু গোপন করবার কিংবা গোপন রাখবার প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। না হলে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হুমকি হতে পারে এমন উপধারা সংযুক্তির কোনো কারণ থাকতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে প্রশাসনের কী লাভ?
এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে অসত্য কিংবা বিকৃত তথ্য প্রকাশ বা ছড়ানোর বিষয়ে যথাযথ আইন রয়েছে। সেগুলো তদন্তের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নিষ্পত্তি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরূপ অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে অস্পষ্ট ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে দোষী সাব্যস্ত করার কর্তৃত্ব রাখে না। আমি এরূপ উপধারা সংযোজনের নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে উপধারা দু’টির বিলুপ্তির প্রত্যাশা করছি।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শৃঙ্খলাবিধি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আছে। সে আইনের মাধ্যমেই সব অপ্রত্যাশিত সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই আইনকে কখনো সঠিকভাবে প্রয়োগ করেনি। এখন নতুন ধারা সংযুক্ত করার প্রশ্নই আসে না। আমরা এটিকে দুরভিসন্ধিমূলক ও কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে দেখি।’
জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি প্লাবন তারিক বলেন, বর্তমানে জাবিতে জাকসু না থাকার কারণে প্রশাসনের অন্যায়, আচরণ ও দুর্নীতির বিষয় শুধু সাংবাদিকেরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। আজকে এ ধারা সংযুক্ত করে সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করারও পথ তৈরি করেছে। আমরা এ ধারার দ্রুত অপসারণ চাই, অন্যথায় বিকল্প পথে এগোনোর চিন্তা করব।
এ দিকে ধারাটি নজরে আসার পর ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোট পৃথক বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে এ ধারা রদ করার আবেদন জানান। জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘এই ধারা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করা চেষ্টা। আমি এই প্রেক্ষিতে সবাইকে ফের জাকসু নিয়ে সরব হতে বলব। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করার প্লার্টফম নেই। জাকসু থাকলে এসব বিষয় প্রশাসনের সাথে বসে সমাধান করা যেত।
জাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান সৈকত বলেন, ‘এ আইন গণমাধ্যমকর্মী, রাজনৈতিককর্মী ও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করার প্রয়াস। যেহেতু কোনটি অসত্য বা বিকৃত তথ্য তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা একমাত্র প্রশাসনের হাতে, স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের দুর্নীতি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ পাবে তাই প্রশাসনের দৃষ্টিতে অসত্য বা বিকৃত বলে বিবেচিত হবে। মূলত জাবিতে চলমান ১৪৫০ কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টকে সামনে রেখে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করার জন্যই এ ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যলয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘এটা সিন্ডিকেট অনুমোদন দিয়েছে তাই কার্যকরভাবে আইনে পরিণত হয়েছে। আর কোনো বিতর্ক তৈরি হয়ে থাকলে ঈদের বন্ধের পরে ভিসি সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরলে অলোচনা করে দেখব।
এ বিষয়ে প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মো: আমির হোসেন বলেন, ‘শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেভাবে পর্যালোচনা করার সুযোগ হয়নি। নতুন বর্ষের প্রবেশিকা অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে তাড়াহুড়া করে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সেখানে সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পক্ষের আপত্তি থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান হতে পারে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান বিরোধী নয় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের

সকল