২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফোন চুরির অভিযোগে সাংবাদিকদের আটকে রাখলেন শমী কায়সার

-

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে স্মার্টফোন চুরির অভিযোগ এনে তাদের আটকে রেখেছিলেন অভিনেত্রী শমী কায়সার। এ সময় দরজা বন্ধ রেখে তিনি প্রায় অর্ধশত সাংবাদিকের দেহেও তল্লাশি করিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শমীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা এক আলোকচিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরার লেন্স খুলেও তল্লাশি করতে চেয়েছিলেন বলে ওই সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আটকে রাখা কোনো কোনো সাংবাদিক বের হতে চাইলে ‘চোর’ বলে তাদের হেনস্তা করেন শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মীরা। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন সংবাদকর্মীরা। শেষে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে শমী কায়সার ক্ষমা চেয়ে শেষ রক্ষা পান। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর এখন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি এবং এফবিসিসিআইর পরিচালক।
ঘটনার সূত্রপাত সকাল ১০টার পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে। সেখানে ‘বিন্দু ৩৬৫’ নামের একটি টুরিজম কোম্পানির যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠান ছিল সকাল ১০টায়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে তখনো প্রধান অতিথি উপস্থিত হননি। এর আগেই র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বক্তব্য দিয়ে বের হয়ে যান। এরপর আয়োজকেরা কেক কাটার সিদ্ধান্ত নেন।
চলচ্চিত্র তারকা জয়া আহসান, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি, ও অভিনেত্রী শমী কায়সারের উপস্থিতিতে শুরু হয় কেক কাটা। এরই মধ্যে অভিনেত্রী শমী কায়সার চিৎকার দিয়ে ওঠেন। বলেন, ‘আমার দু’টি ফোনই চুরি হয়েছে।’ এ সময় পুরো মিলনায়তনে শমী কায়সারকে নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শমী কায়সার। এ সময় তিনি সাংবাদিকেরা তার মোবাইল চুরি করেছে অভিযোগ করে মিলনায়তনে উপস্থিত সবাইকে আটকে রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেকের পকেটে তল্লাশি চালিয়ে ফোন দু’টি খুঁজে বের করা হবে।’ এরপর প্রায় ১০ মিনিট ধরে মিলনায়তনে একাধিক সাংবাদিকের ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। তখন কেউ কেউ বের হতে চাইলে ‘চোর’ বলে তাদের যেতে বাধা দেন শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মীরা। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে চাইলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাই শমী কায়সারের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানান অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে আসা সাংবাদিকেরা। অবস্থা বেগতিক দেখে শমী কায়সার নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান অতিথি আসার আগেই অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন আয়োজকেরা।
এরপর আয়োজক ও অতিথিদের উপস্থিতিতে সিসিটিভি ও উপস্থিত টিভি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, কেক কাটার সময় কেকের পাশে থাকা সাদা টি-শার্ট পরিহিত এক তরুণ শমী কায়সারের ফোন দু’টি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তার পরনে অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীদের টি-শার্ট ছিল। তবে ভিডিওতে তার চেহারা দেখা না যাওয়ায় আয়োজকেরা নিশ্চিত হতে পারেননি ওই তরুণ তাদের স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন কি না। ভিডিও ফুটেজ দেখার পর শমী কায়সার তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত বাজে একটি দৃষ্টান্ত হলো। ফোন তল্লাশির ঘটনায় অনেকে কষ্ট পেয়েছেন, সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ করেছেন। আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।
এ বিষয়ে ‘বিন্দু ৩৬৫’-এর উদ্যোক্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি ঘটনা। আমার আমন্ত্রণে অতিথিরা এসেছেন, কিন্তু এমন ঘটনায় আমি খুব বিব্রত। সাংবাদিক-অতিথি সবার কাছে দুঃখপ্রকাশ করছি। আশা করি সবাই বিষয়টিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।’
অনুষ্ঠানে আসা এক সাংবাদিক এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এরকম অপমান মেনে নেয়া যায় না। আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। আমরা তো এখানে মোবাইল চুরি করতে আসিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যামেরার লেন্স খুলে চেক করতে চেয়েছে। এমন হবে কেন। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরাও মোবাইল খুঁজে পেতে সহযোগিতা করতাম। তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনে এমন আচরণের বিচার দাবি করেন।
জাতীয় মানবাধিকার
সমিতির নিন্দা
অভিনেত্রী শমী কায়সারের স্মার্টফোন চুরি যাওয়ায় সাংবাদিকদের আটক রেখে তল্লাশির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি। সংগঠনের চেয়ারম্যান মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসা ও মহাসচিব মুহাম্মদ মফিজুর রহমান লিটন গতকাল এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভেতরেই সাংবাদিকদের এভাবে নাজেহাল হতে হবে তা কারো প্রত্যাশা ছিল না। প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্তান হিসেবে শমী কায়সারের প্রতি সবার স্নেহ ছিল। কিন্তু তিনি যেই ঘটনা ঘটিয়েছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ সাংবাদিক মহল কী সিদ্ধান্ত নেবে সেদিকে তাকিয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement