১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৩ গুণ অর্থ ব্যয়ে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা

ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা; ২০১১ সালে ব্যয় হয়েছিল ২৫৩ কোটি টাকা
-

দশ বছরের ব্যবধানে আগামী ২০২১ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনায় ব্যয় বাড়ছে ১৩ গুণ। যেখানে ২০১১ সালে পঞ্চম জনশুমারিতে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ২৫৩ কোটি টাকা সেখানে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা; যা আকাশচুম্বী বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আর এই অর্থের জন্য সরকার ছয়টি বিদেশী সংস্থার কাছে ধরনা দিচ্ছে। এ-সংক্রান্ত প্রকল্প এরই মধ্যে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হয়েছে বলে বিবিএস সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ১০ বছর অন্তর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ করে। আগামী ২০২১ সালে ষষ্ঠবারের মতো এই শুমারির কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর বাকি ৯৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে বিদেশী সংস্থা থেকে নেয়া হবে। আর এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে ইউএনএফপিএ, ডিএফআইডি, ইইউ, ইউএসএইড ও কোইকা। অনুমোদন না পাওয়ার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই শুমারি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। যেটা আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের সমাপ্ত করার কথা ছিল।
জানা গেছে, ষষ্ঠ শুমারিতে সব মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিক এবং বিদেশে সাময়িকভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিককে গণনার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিটি খানা ও শতভাগ জনগণকে গণনায় অন্তর্ভুক্ত করে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ পরিচালনা করা, সব ধরনের আর্থসামাজিক জরিপের জন্য নমুনা ফ্রেম প্রস্তুত করা, জেলাভিত্তিক জনসংখ্যার প্রক্ষেপণ করা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণের জন্য তথ্য সরবরাহ করা, জাতীয় সম্পদ বণ্টন ও কোটা নির্ধারণে তথ্য সরবরাহ করা, অর্থাৎ চার ধাপে এই জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে দেশের প্রতিটি খানার তালিকা প্রণয়ন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। খানা তালিকায় প্রবাসীসহ খানার সব সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তাদের তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। প্রতিটি খানার জন্য একটি ইউনিক খানা নম্বর ব্যবহার করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হবে; যা জনশুমারির ফ্রেম হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এই ধাপের পর খানা তালিকা হালনাগাদ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে মূল শুমারি পরিচালনা করা হবে। এতে আইসিআর প্রশ্নপত্র, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ই-মেইল ব্যবহার করা হবে। মূল শুমারির মাধ্যমে ডিফেক্ট বা ডিজুর পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট রেফারেন্স তারিখের জনসংখ্যা ও খানাসংক্রান্ত সব মৌলিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে।
মূল শুমারি সম্পন্ন হওয়ার এক মাসের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ও মান যাচাইয়ের জন্য নমুনা গণনা এলাকা হতে গণনা পরবর্তী জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সর্বশেষ ধাপে মূল শুমারির সম্পূরক হিসেবে বিশদ প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইনটারভিউর (সিএপিআই) মাধ্যমে নমুনা গণনা এলাকায় আর্থসামজিক ও জনতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হবে।
এ কাজে সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা, পেশাগত সেবা, সম্মানী ও বিশেষ ব্যয় খাতে। মুদ্রণ ও মনিহারিতে ৯০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রশিক্ষণে ৪৮০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রশাসনিক ব্যয় ৪৩৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মজুরি ও বেতনে যাবে ১১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। এরপর হয়েছিল ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ এবং সর্বশেষ ২০১১ সালে। ২০১১ সালের কাজে মোট ৩ লাখ ১০ হাজার গণনাকারী এই কাজে নিয়োজিত ছিল।
বিবিএস সূত্র বলছে, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশে অর্থায়নের ব্যাপারে সমন্বয় করছে। শিগগিরই উন্নয়ন সহযোগী কনসোর্টিয়াম মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দবিহীন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এনডিজি) ২৩২টি সূচকের মধ্যৌ ১৬টি সূচকের তথ্য এই শুমারি থেকে পাওয়া যাবে। আর ৯৭টি সূচকের দিভাজক হিসেবে এর তথ্য ব্যবহার করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement