২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ববির শিক্ষকদের বেতনভাতা বন্ধের নির্দেশ দিলেন ভিসি

-

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন দমাতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ভিসি ড. এস এম ইমামুল হক। একইসাথে তিনি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতেও নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের অর্থ বরাদ্দ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে দেয়া হয়। ভিসির এমন নির্দেশের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতনভাতা তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ভিসির স্বাক্ষরিত গত ১৬ এপ্রিলের এক নোটিশে ব্যাংকের দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো ধরনের অর্থ না দেয়ার জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে- আপনাকে (ব্যবস্থাপক) জানাচ্ছি যে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নম্বর (০৩৩৮১১০০০০০০১) ও (০৩৩৮১১০০০০০০২) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাবতীয় অর্থ প্রদান (ইতঃপূর্বে প্রদত্ত সব চেক) স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করছি।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, ভিসির সিদ্ধান্তটি অমানবিক। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলন দমাতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে করে তার পদত্যাগ দাবির আন্দোলন আরো বেগবান হবে।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকায় অবস্থানরত ভিসি ড. এস এম ইমামুল হকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে একই ফোন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসের কর্মচারী পরিচয়ে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, ভিসি স্যারের কাছে কোনো কিছু জানার থাকলে আমাকে বলতে পারেন। তার কাছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
সোনালী ব্যাংক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যবস্থাপক দেবাশীষ চৌধুরী মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ এপ্রিল ভিসি ড. এস এম ইমামুল হক একটি ই-মেইল পাঠিয়েছেন। সেখানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দু’টি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাবতীয় অর্থ প্রদান স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভিসির নির্দেশনা মতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর আগে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা। শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতাসহ আট দফা দাবিতে গত চার দিন (২ ঘণ্টা করে) অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার থেকে তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। মানববন্ধন থেকে ভিসির পদত্যাগ দাবি করা হয়।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন ভিসি। তার ওই বক্তব্যের পর ২৮ মার্চ থেকে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হয়। একইদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস, পরীক্ষা ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে ওই দিনই তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ভিসি ২৯ মার্চ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। তারা তার পদত্যাগের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। তাদের চলমান আন্দোলনের মুখে ভিসি ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ভিসির ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তার কর্ম মেয়াদকাল ২৮ মে পর্যন্ত ছুটি নতুবা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement