২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি রিনার পথচলা

প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি রিনার পথচলা : নয়া দিগন্ত -

ইচ্ছাশক্তি থাকলে কাউকেই যে থমকে দাঁড়াতে হয় না, তার একটি বড় উদাহরণ রিনা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যার বাজার ইউনিয়নের দামোদরদী গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের মেয়ে প্রতিবন্ধী রিনা আক্তার। রিনার একটি পা নেই এবং অন্য পা খুব ছোট ও বোধ শক্তিহীন। তাই তার চলাচলের একমাত্র অবলম্বন মায়ের কোল। দুই বছর আগে মৃত্যুবরণ করা রিনার বাবা ছিল শরবত বিক্রেতা। হাটে বাজারে বেলের শরবত বিক্রি করেই চালাত তার চার সন্তান নিয়ে বড় সংসার। রিনা সংসারের তৃতীয় সন্তান। বড় বোনের বিয়ে হয় ছোট থাকতেই। মেঝ ভাই রিনার মাত্র দেড় বছরের বড়। মাধ্যমিক পাস করলেও বাবা মারা যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে গিয়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। জীবিকার তাগিতে শুরু করেন বাবার শরবতের ব্যবসায়। ছোট বোন পান্না বৈদ্যার বাজার এন এ এম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।
এবার বলি রিনার পথ চলার গল্প। ২০০০ সালে জন্ম হওয়া রিনাকে নিয়ে জন্মের পর থেকেই শুরু হয় তার বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা। কিভাবে চলবে রিনার জীবন। তাকে ভর্তি করে দেয়া হয় ব্র্যাক পরিচালিত স্থানীয় এক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয় থেকে রিনা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে সফলতার সাথে পাস করে। তার এই ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে মা-বাবা তাকে স্থানীয় বৈদ্যেরবাজার এনএএম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। সেখান থেকে রিনা ২০১৪ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৯০ পেয়ে সফলতার সহিত কৃতকার্য হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পিরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হয়। পরে রিনা সোনারগাঁও উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হওয়ার জন্য গেলে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার জন্য ভর্তি হতে পারেনি। পরে অন্যদের সহযোগিতায় সে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। এ বছর রিনা এইচএসসি পরীক্ষা দেবে।
রিনা নয়া দিগন্তকে বলে, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার মা খুব কষ্ট করে আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি আমার সমর্থ অনুযায়ী ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করি। রিনা জানায়, এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। উচ্চশিক্ষা শেষে একজন সফল ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখে এই অদম্য যোদ্ধা।
রিনার মা মরিয়ম বেগম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা গরিব, আমার মেয়ে শত বাধাকে অতিক্রম করে পড়ালেখা করছে। আমার স্বামী মারা যাওয়ায় আমার সংসার চালানো যাচ্ছে না। এর মধ্যে রিনা ও তার ছোট বোন পান্নার পড়ালেখার খরচ চালানো বড় কষ্ট হয় আমার।
স্থানীয় বৈদ্যার বাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো: বাসেদ মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, বাবাহারা কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সমর্থ অনুযায়ী সব সময় কিছু সাহায্য সহযোগিতা করি।
সোনারগাঁও উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শাহানা সুলতানা নয়া দিগন্তকে জানান, রিনা খুব ভালো মেয়ে। সে আমাদের কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি জেনেছি ছোটবেলা টইফয়েড হয়ে ওর পা দু’টো স্বাভাবিক মানুষের পায়ের মতো বৃদ্ধি পায়নি। এবং ছোট পা দু’টিতে বোধ শক্তি নেই। রিনা তার মায়ের কোলে করে কলেজে আসা-যাওয়া করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন কুমার সরকার নয়া দিগন্তকে বলেন, রিনা আক্তার ও তার পরিবারকে সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসন এগিয়ে আসবে। আমি ওই মেধাবীর খোঁজখবর নেবো। তাকে যতদূর সহযোগিতা করা যায় আমরা তা করার চেষ্টা করব।


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শ্রমিক নিহতের খবরে ঈশ্বরগঞ্জে শোক দুর্যোগে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু কেন বাংলাদেশে? জবিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের

সকল