২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের জামিন বহাল

-

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে করা একাধিক মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ কিছু অবজারভেশনসহ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দেন।
এই আদেশের ফলে হাইকোর্ট বিএনপি নেতাদের যে আগাম জামিন দিয়েছেন তা নাকচ হয়নি এবং তাদের জামিন বহাল রয়েছে। এছাড়া আপিল বিভাগ তার লিখিত আদেশে আগাম জামিনের বিষয়ে গাইড লাইন দেবেন বলে এ মামলার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন।
আদালতের আদেশের পর তিনি বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থায় হাজার হাজার বিরোধী দালের নেতাকর্মী গায়েবি মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে জামিন নিতে আসেন। পুলিশের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এরপর তারা হাইকোর্টের আগাম জামিন পাওয়ার পর যখন নিম্ন আদালতে যান তখন দেখা যায় ঢালাওভাবে নিম্ন আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠায়। এতে আমরা মনে করি হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়। কেন না হাইকোর্ট যখন জামিন দেন তখন মামলার বিষয়বস্তু বিবেচনা করেই জামিন দেন। সে ক্ষেত্রে কেন বিশেষ কারণ ছাড়া ঢালাওভাবে হাইকোর্টের জামিনের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা না দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়? এ বিষয়গুলো আমরা শুনানিতে বলেছি। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন। পরে লিখিত আদেশ দেবেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য নেতারা হলেনÑ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ও বরকত উল্লাহ বুলু, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, ড্যাব নেতা এ জেড এমন জাহিদ হোসেন, বিএনপি নেতা অধ্যাপক ডা: মোরশেদ হাসান খান, অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসাইন, মো: শাহজাহান ও আমিনুর রহমান।
এ ছাড়া একই মামলায় হয়েছেন আসামি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতকাল আদালতে বিএনপি নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সাথে ছিলেন আইনজীবী মাসুদ রানা। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আগাম জামিনের ব্যাপারে আপিল বিভাগের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে। যে সিদ্ধান্ত রয়েছে তা পরিবর্তন চেয়ে আমরা একটি নীতিনির্ধারণ করে দিতে বলেছি। আমরা পরিবর্তন চেয়ে একটি পলিসি নির্ধারণ করে দিতে বলেছি। কারণ সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাতে হাইকোর্টের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। হাইকোর্টের ক্ষমতা খর্ব না করে জনস্বার্থে ওই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হওয়া দরকার। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের একটি গাইডলাইন প্রয়োজন। তিনি বলেন, আগের গাইডলাইনের কারণে আগাম জামিন সীমিত হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, ৬৬ ডিএলআর-এর যে সিদ্ধান্ত চার সপ্তাহের বেশি জামিন দেয়া যাবে না। সেখানে ওই আসামিদের চার সপ্তাহের বেশি জামিন দেয়া হয়। তিনি বলেন, তখন নির্বাচনকালীন সময় অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঢালাওভাবে পুলিশ মামলা দেয়। এতে মৃত ব্যক্তি বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়। সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে চার সপ্তাহের বেশি জামিন দিতে পারেন। তিনি আরো বলেন, ৬৬ ডিএলআর-এর এই সিদ্ধান্ত ৫১ ডিএলআর-এর ওয়াহাব শাহের মামলার পরিপন্থী।
গত অক্টোবর মাসে রাজধানীর হাতিরঝিল ও খিলগাঁও থানায় করা নাশকতার দুই মামলায় হাইকোর্টে জামিন পান বিএনপি নেতারা। গত ১ অক্টোবর হাতিরঝিল থানায় মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ। এছাড়া খিলগাঁও থানায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অপর একটি নাশকতার মামলা দায়ের করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement