২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘ও ফেরি, আর কত দুঃখ দিবা’

তিনটি ফেরির একটি চলে

-

ভ্যানের ওপর হাঁড়ি-পাতিলসহ ঘরের আসবাবপত্র। এক কোণে বসা ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। বিড় বিড় করে বলছেন, আর কতক্ষণ লাগবে ফেরি আসতে। ওই পাড়ে কেন এখনো আটকে আছে। তাড়াতাড়ি এলে তো আমরা নদী পার হই। ও ফেরি আর কত দুঃখ দিবা আর কত কষ্ট দিবা।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন বলে ওঠেন, ‘দেখো আধা ঘণ্টা বসে আছি। বাসা বদলাই শহর থেকে নদীর ওই পারে নবীগঞ্জে যামু। ভ্যানে মাল-ছামানা। কিন্তু ফেরিটা ওই পাড়ে আটকা আছে। এখনো আসে না। তিনটা ফেরি। চলে মাত্র একটা। তাও ঠিকমতো চালায় না।’ বৃদ্ধা সুফিয়া শনিবার দুপুরে যখন কথা বলছিলেন, ঠিক ওই সময় ফেরির অপেক্ষা প্রায় আধা কিলোমিটার যানজটে আটকা পড়েছে বিভিন্ন যানবাহন।
ঠিক এরকম অব্যবস্থাপনার কারণে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরি ঘাটটাই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই পাড়ের কয়েক হাজার বাসিন্দাদের জন্য। তিনটি ফেরির মধ্যে মাত্র একটি ফেরি চলাচল করাতে প্রতিদিনই দুই পাড়েই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আর তাতে চাষাঢ়া-চিটাগাং রোড সড়কে চলাচলকারী অন্য যানবাহনও আটকে পড়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার সকাল থেকেই তীব্র যানজটের কবলে পড়ে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করতে হচ্ছে গাড়িতে বসেই। ১০ মিনিটের রাস্তা যানজটে হয়ে গেছে এক থেকে দেড় ঘণ্টার রাস্তা। শুক্রবার সকাল থেকেই সড়কে ছিল এ পরিস্থিতি।
হাজীগঞ্জ ঘাট থেকে আইইটি স্কুলের মোড় পর্যন্ত ও হাজীগঞ্জ ঘাট থেকে ড্রেজার অফিস পর্যন্ত চলে গেছে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। হঠাৎ করে কয়েক কদম এগোনো সম্ভব হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা থমকে যেতে হচ্ছে। দু-একটা গাড়ি আগেভাগে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে যানজটের সমস্যা আরো প্রকট হয়ে ওঠে। দুই লাইনের রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে চার লাইন করে। আর এ বিভ্রাটের মধ্যে পড়ে আছে হাজারো ভুক্তভোগী।
দুরন্ত পরিবহনের চালক রশিদ মোল্লা জানান, ‘এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। সবাই আগে যাবে। তাই তাড়াহুড়া করে সামনে এসে পড়ে। গাড়ি এ দিকেও আগায় না ওদিকেও আগায় না। এখন আল্লাহই ভরসা।’ গাড়ি বোঝাই রোড নিয়ে বন্দরের উদ্দেশ্যে এক ট্রাকচালক মজিদ মিয়া। তিনি বলেন, এত গাড়ি অথচ ফেরি একটি। জায়গা সঙ্কুলানের কারণে গাড়ি চাপানোরও কোনো সুযোগ নেই। দুই পাশের সড়কই বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ফেরিগুলো সচল থাকলে এমনটি হতো না।
একটু সামনেই এগিয়ে আসতেই দেখা যায় ফুল দিয়ে সাজানো একটি সাদা রঙের গাড়ি। ভেতরে বর বসে আছে। পেছনে আরেক বর যাত্রীদের গাড়ি। কুমিল্লা দাউদকান্দি থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় রওনা হয়েছে তারা। দূরের রাস্তা তাই আগেভাগেই বের হয়েছিল; যাতে বেশি রাত না হয়। কিন্তু বেলা আড়াইটা বাজে এখন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। তবে এমন যানজট কেন? কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, সব যানজটের মূলস্থল হিসেবে চিহ্নিত হয় নবীগঞ্জ ঘাট। সেখানে গিয়ে তিনটির মধ্যে একটি ফেরি চলাচল করতে দেখা যায়।
এক মোটরসাইকেল আরোহী পল্লী বিদ্যুতের প্রকৌশলী মকবুল হোসেন জানান, তিনি এক ঘণ্টা ধরে ফেরির অপেক্ষায় আছেন। প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে।
ফেরির রিসিট প্রদানকারী কর্মচারী আসানুল্লাহ বলেন, একটি ফেরি নষ্ট সেটি ঠিক করা হচ্ছে। ফেরির অন্য একজন কর্মচারী বলেন, সব ফেরি ঠিক আছে। কিন্তু ২টার বেশি চালানো হয় না। অনেক বেশি গাড়ি হলে তখন ২টা ফেরি চলে। পিকআপ চালক রহমতউল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘ফেরি আছে এর পরও বন্ধ করে রাখছে। তাহলে বেশি ফেরি রাইখা লাভ কী? ১টা ফেরি চলে, এটার সুবিধা পাইতাছি। আর গাড়ি চালাই, এইটুকু তো বুঝি যন্ত্রপাতি না চালাইলে নষ্ট হইয়া যায়। ১টা চালাইবো আর ৩টায় জং ফালাইবো। কয়দিন পরপরই শুনি ফেরি নস্ট হইয়া গেছে।’
জানা গেছে, ফেরির টোল আদায়ের হার ট্রেইলার গাড়িতে ৩৭৫ টাকা, হেভি ট্রাক ৩০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১৫ টাকা, বড় বাস ১৩৫ টাকা, মিনি বাস ১১৫ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান ৯০ টাকা, মিনি বাস ৭৫ টাকা, মাইক্রো বাস ৬০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন ৬০ টাকা, সিডান কার ৪০ টাকা, ৩-৪ চাকার মোটররাইজড যান ১৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা, রিকশাভ্যান, রিকশা, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি ৫ টাকা। ফেরিচালক মো: বিল্লালের কাছে ফেরি ১টি চলছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব ফেরি ঠিক আছে। কিন্তু গাড়ি কম। ফেরি পরিপূর্ণ না হলে চালানো যায় না। তেলের অনেক খরচ বেশি, পোষায় না। এই ফেরি দিনে ৩০-৩৫ বার পারাপার করে।
তবে বিল্লালের কথার সাথে একমত নন যাত্রীরা। তারা বলছেন, প্রতিবার ফেরিতে ৬-৭টা বড় গাড়ি ওঠে। সাথে ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল তো আছেই। প্রতিবারে পারাপারে ৭০০-৮০০ টাকা উপার্জন হচ্ছে। ১টি ফেরিতে দিনে উপার্জন প্রায় ২৬-২৮ হাজার টাকা। ফেরির একজন কর্মচারী জানান, ফেরিতে ১ দিনে তেল বাবদ খরচ হয় ৬ হাজার ৫০০ টাকা। তার মানে লাভজনক। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বাকি তিনটি ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফেরির সুপারভাইজার হাবিবুর রহমান জানান, অনেক সময় যানবাহন থাকে না, তাই ফেরি বন্ধ রাখতে হয়। যানবাহন এলে আবার চালু করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
খুলনায় ইসতিসকার নামাজ আদায় ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে সংঘর্ষে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত শিশুদের বিকাশে অটিজম অভিভাবকদের সচেতনতা ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন : দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি নেতাদের মুক্তির দাবিতে রিজভীর নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির মিছিল বৃষ্টির জন্য দেশবাসীর প্রতি ইস্তিস্কার নামাজ আদায়ের আহ্বান আমিরে জামায়াতের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চুক্তি স্বাক্ষর করল তুর্কি, ইরাক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ঢাকায় ‘হিট স্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

সকল