২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে পিডিরা প্রকল্প এলাকায় থাকছেন না

প্রকল্পের ধীরগতিই উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে মতপার্থক্য তৈরি করছে : পরিকল্পনামন্ত্রী

-

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ পাওয়া এক হাজার ৪৫১টি প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় সরকার। প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্পের শত ভাগ বাস্তবায়ন দেখতে চায়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মনে করছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে ঋণদাতাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতের অমিল হওয়া। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমাদের অমিলের বিষয় হচ্ছে, আমরা যে বিদেশী ঋণ গ্রহণ করি, সে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করি। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে। আর যারা আমাদের ঋণ দিচ্ছে, তাদেরও আইন আছে। তারাও চান তাদের আইনের কাঠামোর মধ্যে থাকতে। অবশ্য তাদের আইনকে আমি সম্মান করি। এটা তাদের অনুসরণ করতে হয়। ফলে দুইপক্ষের মধ্যে গৃহীত প্রকল্পের কাজে কিছুটা মিসম্যাচ (অমিল) হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মনে করে, আমাদের এখানে প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা বেশির ভাগ দায়ী। প্রকল্প গ্রহণ করার পর প্রকল্প পরিচালকেরা প্রকল্প স্থানে থাকেন না। অপর দিকে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পের গতি অর্জন করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে প্রস্তাবনা এই একটাই। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো পরামর্শ থাকে তা গ্রহণ করতে রাজি আছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রকল্প পরিচালক প্রকল্প এলাকাতে থাকেন না। ফলে এটাতে কাজের গতি হারায়।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সাথে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন নিয়ে পর্যালেচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব সমস্যার কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য আসিফ-উজ-জামান এবং তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের অর্ধেকের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও প্রকল্পের অগ্রগতির হার মাত্র ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই হার ছিল ৩৩.৩৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির বিলম্বের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) আমাদের চেনেন, আমাদের দোষ দেন। কিন্তু তাদের (দাতগোষ্ঠী) সাথে সমঝোতা করতে গিয়ে দেরি হয়ে যায় অনেক সময়। প্রচ্ছন্ন কিছু বিষয় থাকে যেগুলো আপনারা দেখেন না। অন্য দিকে ঋণদাতা উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে আলোচনা করতে গিয়ে দেখা যায়, আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের গতি নিয়ে তাদের সাথে কিছু মিসম্যাচ হয়। আর দায়টা আমাদের ওপর আসে বলে মন্তব্য করেন এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটা আমরা একা ঠিক করতে পারব না। এ জন্য ইআরডিকে অনুরোধ করেছি, এটা আরো কীভাবে কমিয়ে আনা যায়। অর্থমন্ত্রীর সাথেও আলোচনা করব, কীভাবে এটা সমাধান করা যায়।
প্রকল্পের সাথে পরিচালককে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকতে হবে বলে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একটি প্রকল্পের সফলতা নির্ভর করে ওই প্রকল্প পরিচালকের ডায়ানেমিক লিডারশিপের মাধ্যমে প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকার মাধ্যমে। অথচ তারা প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করেন না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন থাকলেও অনেক পিডি সেটি পালন করছেন না। এ বিষয়টি আমরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করব।
এম এ মান্নান বলেন, একজনকে একাধিক প্রকল্পের পরিচালক করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে, একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব না দেয়ার জন্য। যদিও আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে লক্ষ করছি, এখনো আছে। যদি সঙ্গত কোনো কারণ থাকে, তাহলে যার অর্ডার, তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এটার ব্যত্যয় ঘটানো যেতে পারে।
প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় না থাকাকে ভয়ঙ্কর উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কিছু প্রকল্প আছে মাঠে থাকতে হয় না। বদ্ধঘরে থেকে করতে পারব। প্রকল্প ঢাকায় হলে ঢাকায় থাকতে হবে, চট্টগ্রামে হলে চট্টগ্রামেই থাকতে হবে। মূল কথা হলোÑ প্রকল্পের পরিচালকরা প্রকল্পকে ওন (ধারণ) করে প্রকল্পকে কাছে রাখবে। এটা প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ ভূমি অধিগ্রহণ। এ জন্য ভূমি সচিবকে নির্দেশনা দেন জনবল নিয়োগসহ কীভাবে বিষয়টার সমাধান করা যাবে, তা খুঁজে দেখার জন্য। তিনি বলেন, প্রকল্পের গতি বাড়াতে এই ধরনের সভাতি তিন মাস পরপর হবে।


আরো সংবাদ



premium cement