২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্যাপির সংবাদ সম্মেলন

ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির অন্যায্য কর ছাড় বন্ধসহ ৮ দফা দাবি ঘোষণা

-

সাউথ এশিয়ান অ্যালায়ান্স ফর প্রভার্টি ইরাডিকেশনের (স্যাপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমাজে বৈষম্য কমাতে ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধসহ ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এ সময় দাবি বাস্তবায়নে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্যাপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সঙ্ঘের (বিএনপিএস) নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আফরোজা বানু। বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ডা: রশিদ-ই-মাহবুব, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘরের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা: লেনিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীব উদ্দিন খান, ইনসিডিন বাংলাদেশের পরিচালক মুশতাক আলী, বিএনপিএসের শাহনাজ সুমী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ৮ দফা লিখিত দাবিনামায় বলা হয়, ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানিকে ন্যায্য ভাগ পরিশোধে বাধ্য করতে হবে। নারীদের জন্য বৈষম্য ও শোষণমূলক নয়, এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দায়িত্বশীল রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, ন্যূনতম মজুরি আইন বাস্তবায়ন এবং লিঙ্গবৈষম্যমূলক বেতন পরিহারের মাধ্যমে করপোরেট লোভ পরিহার করতে হবে। জলবায়ু বিপর্যয় রোধ ও জীবাশ্ম জ্বালানির অযৌক্তিক প্রভাব দূর করতে সচেষ্ট হতে হবে। নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
এতে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠী সীমাহীন বৈষম্যের শিকার। বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯০-২০১৩ সময়ের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী দরিদ্র লোকের সংখ্যা ২৪৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন হ্রাস পেলেও পালমা রেশিও (বৈষম্যের সূচক) দ্বারা দক্ষিণ এশিয়ার ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তির সামগ্রিক জাতীয় আয়কে (জিএনআই) ৪০ শতাংশ দরিদ্র ব্যক্তির সামগ্রিক জাতীয় আয় দিয়ে ভাগ করে দেখা যায়, ওপরের ১০ শতাংশের আয়ের তুলনায় নিচের ৪০ শতাংশের আয় হ্রাস পাচ্ছে।
ডা: রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যকার সামাজিক চুক্তিকে ধ্বংস করে এবং বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সহযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করে জনগণকে দরিদ্র ও নীরব রাখা হচ্ছে। ক্ষমতাবানকে শক্তিশালী করার এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে আমরা একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেলের দাবি করছি। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সক্রিয়জন, সামাজিক আন্দোলন, নারীবাদী, আদিবাসীসহ সবার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা, শান্তি এবং গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণ করবে এমন রাষ্ট্র চাই, যা একটি অধিকতর ভালো বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করবে।
সভাপতির বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই বৈষম্যের শিকার। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা আঁতাত করে এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেখানে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য। মূলত এই বিষয়গুলোর ফলেই বিগত ৩০ বছর ধরে বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে। এই বৈষম্য কমাতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement