২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতেই চার বছর পার

দুই ফিল্ডে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ আছে মাত্র ৫ মাস
-

দাতাদের কারণে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। মেয়াদ শেষ হতে চললেও প্রকল্পের ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হয়নি চার বছরেও। ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে তিতাস লোকেশন সি ও নরসিংদী ফিল্ডে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন প্রকল্পটি স্থবির হয়ে আছে দাতা সংস্থার কারণে। গত ডিসেম্বরে জাইকার সম্মতি চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হচ্ছে না বলে সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে।
বাস্তবায়নকারী সংস্থার সূত্র মতে, গ্যাসের চাহিদা দেশে যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই কমে আসছে গ্যাস উৎপাদিত কূপগুলোর সরবরাহের চাপ। জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে পুরনো কূপগুলোর সরবরাহ পাইপলাইনের স্বাভাবিক চাপ ১ হাজার পিএসআইজি ধরে রাখতে কম্প্রেসর স্থাপন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিতাস লোকেশন সি ও নরসিংদী ফিল্ডে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন না হলে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছর পর জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই জাপানভিত্তিক দাতা সংস্থা জাইকার ৭২৯ কোটি টাকা ঋণসহায়তায় সরকার গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে কম্প্রেসর স্থাপনের জন্য প্রকল্প ২০১৪ সালে অনুমোদন দেয়। কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। আর প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৮৬৮ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, তিতাস লোকেশন-সি ও নরসিংদী ফিল্ডে অবস্থিত কূপগুলোর ওয়েল হেড চাপ প্রতি বছর হ্রাস পাচ্ছে। এ জন্য স্থান দু’টিতে দ্রুত কম্প্রেসার স্থাপন না করলে উৎপাদিত গ্যাস ১ হাজার পিএসআইজি চাপে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তিতাস গ্যাস ফিল্পের লোকেশন-সি ও নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডের ওয়েলহেড চাপ (উৎপাদন) বৃদ্ধি করতেই কম্প্রেসার স্থাপন করা হবে। চাপ বাড়াতে না পারলে তিতাস লোকেশন সিতে আগামী ৩ থেকে ৪ বছর পরে এবং নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডে ৫ থেকে ৭ বছর পর উৎপাদিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিতাস লোকেশন-সি-তে অবস্থিত কূপগুলো থেকে দৈনিক ১৪০ ঘনফুট ও নরসিংদী ফিল্ড থেকে ৩০ ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ তিতাস ফিল্ডের লোকেশন সিতে প্রতিটি দৈনিক ৯ কোটি ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি এবং নরসিংদী ফিল্ডে প্রতিটি দৈনিক ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো তিনটিসহ মোট ছয়টি কম্প্রেসার স্থাপন করতে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশে দৈনিক মোট গ্যাসের চাহিদা দুই হাজার ৭ শ’ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে এখন গড়ে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ২ হাজার ৩ শ’ কোটি ঘনফুট। সরবরাহকৃত এ গ্যাস দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার ৭৫ শতাংশ পূরণ করছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪২ শতাংশ, শিল্পকারখানায় ২০ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬ শতাংশ, বাসাবাড়িতে ১২ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৭ শতাংশ, সিএনজিতে ৫ শতাংশ ও বাণিজ্যিকভাবে ২ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী এই বিভাজনে ঠিকমতো গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে না।
প্রকল্প পরিচালক জানান, বিজিএফসিএলের কম্প্রেসর স্থাপনে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য প্রথমবার যোগ্য দরদাতা পাওয়া যায়নি। ফলে অর্থায়নকারী জাইকার পরামর্শ মোতাবেক পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন শেষে গত ১৬ আগস্ট জাইকার সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ষ্পষ্টীকরণ করে জাইকার সম্মতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। ঠিকাদারের সাথে খসড়া চুক্তি বিজিএফসিএলের বোর্ড ২৭ ডিসেম্বর অনুমোদন করে। এরপর জাইকাকে চিঠি পাঠানো হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট উইং সূত্র জানায়, তিতাস গ্যাস ফিল্পের লোকেশন-সি ও নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডের ওয়েলহেড চাপ বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সরবরাহের পাইপলাইনে স্বাভাবিক চাপ ধরে রাখতে ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্পটি। এই দু’টি গ্যাসফিল্ড হতে নির্ধারিত চাপে জাতীয় গ্যাস সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখার ফলে বিদ্যুৎ ও সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement