১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ প্রশাসন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যার পাহাড়

-

কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো নিয়ে শুধু আশ^াসেই সীমাবদ্ধ থাকছেন প্রশাসন। স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানো, সমাবর্তনের আয়োজন, শিক্ষার্থী কল্যাণ তহবিল গঠন, বাস সংখ্যা বৃদ্ধি, বিআরটিসির ফিটনেসবিহীন বাস পরিবর্তন, ক্যাম্পাস ওয়াইফাই আওতাভুক্ত করা, হলের খাবারে ভর্তুকি প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আশ^াস দিলেও প্রশাসন তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে নেয়নি। শিক্ষার্থীদের এসব দাবির সমাধান মেলেনি।
আগামী ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার এক বছর পূর্ণ করবেন ড. এমরান কবির চৌধুরী। গত এক বছর বিশাল বিশাল স্বপ্ন দেখিয়ে বক্তৃতা দিয়ে আর রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশে সময় পার করেছেন তিনি। সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানের কথা নিয়োগ পত্রে উল্লেখ থাকলেও কাজ থাকুক বা না থাকুক সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন তিনি রাজধানীতেই থাকেন। এমনকি তিনি যোগদান করার পর পূর্বের রেজিস্ট্রারকে সরিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রারের চলতি দায়িত্বে নিয়ে আসেন। এই রেজিস্ট্রারও সপ্তাহের কয়েক দিনই কর্মস্থলে অবস্থান না করার কারণে প্রশাসনিক অনেক কাজই আটকে থাকে।
এ দিকে উপাচার্য যোগদানের পর তিন মাসের সময়সীমা না মেনে তিনি ইচ্ছেমতো সিন্ডিকেট সভা করেছেন। তার এই অনিয়মতান্ত্রিকতায় সঙ্গী হয়েছে একাধিক শিক্ষক নেতা ও কর্মকর্তা। তৈরি করেছেন নিজের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন পদ ও পদবি।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করার পর সেসব দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়ন দেখেনি শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো সর্বোচ্চ বিবেচনায় বিভিন্ন মেয়াদে বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরও মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘উপাচার্য আমাদের বারবার কথা দিলেও এখনো তা স্বপ্নেই রয়ে গেছে, বাস্তবে তেমন কিছুই দেখছি না। উপাচার্য আসার পর থেকেই বাস বৃদ্ধি, রাস্তা সংস্কার, মাস্টার্সের ভর্তি ফি কমানোসহ বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দিলেও তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি।’
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘উপাচার্যকে সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়েই শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ আরো আন্তরিক হওয়া এবং জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছুই পূরণ করা সম্ভব নয়, তাই বলে কি স্বাভাবিক কার্যক্রম থেমে থাকবে?’
বিভিন্ন সময়ে বিশ^বিদ্যালয়ের সংবাদকর্মীরা তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে তার নিয়োগকৃত গণমাধ্যম উপাদেষ্টার সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ প্রতিবেদনের জন্যও তাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্যের আদেশে বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সাথে দেখতেছি। ইতোমধ্যে স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানোর জন্য কমিটি করে দেয়া হয়েছে, সমাবর্তনের জন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই আমরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারব।’
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শুরু হয়ে বর্তমান চলমান থাকলেও তা চলছে ধীরগতিতে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে। এ ছাড়া নতুন করে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও ক্যাম্পাসকে দুই অংশে বিভক্ত করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বিষয়ে কথা বললে দেশের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্টজনেরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘একজন উপাচার্যের সার্বক্ষণিকই ক্যা¤পাসে থাকা উচিত, আইনানুযায়ীই নিয়মিত সিন্ডিকেটে সভা করা উচিত। কিন্তু তিনি আমার সাবেক সহকর্মী ছিলেন, তাই তার বিষয়ে মন্তব্য করাটা আমার জন্য বিব্রতকর।’


আরো সংবাদ



premium cement