২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচন নিয়ে ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উদ্বেগ

-

বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারকে বহির্বিশ^ থেকে অভিনন্দনের পরবর্তীতে শুরু হয়েছে ভোটের প্রক্রিয়া ও এর ফল নিয়ে নানা বিশ্লেষণ। প্রাথমিকভাবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ও থিঙ্কট্যাঙ্কগুলো এ বিষয়ে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন দিতে শুরু করেছে। অবশ্য ভোটের পরদিন সকালে শেখ হাসিনাকে প্রথম বিদেশী সরকারপ্রধান হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই টেলিফোন করে অভিনন্দন জানান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফোন দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য তা আমলে নেননি। তারা যুক্তি দেন, ‘এ নির্বাচনে বিরোধী জোটের অংশগ্রহণ ছিল এবং বাংলাদেশের মতো দেশের তুলনায় যথেষ্টই শান্তিপূর্ণ ছিল বলতে হবে।’ ঢাকার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথা বলেন সাউথ ব্লকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
তবে ভারতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে তাদের বিশ্লেষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ করতে শুরু করেছে। তাদের অভিমত দেশটির সরকারি মূল্যায়নের সাথে পুরোপুরি মিলছে না। গত দুই সপ্তাহে দিল্লির অন্তত তিনটি প্রথম সারির থিঙ্কট্যাঙ্ক এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্কের মূল্যায়নে কিছুটা সংশয় ও আশঙ্কার বীজ নিহিত থাকলেও শেখ হাসিনাই যে সে দেশের ভবিষ্যৎ এবং বিরোধীদের মধ্যে তারা আশু কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না, সেটাও মোটামুটি পরিষ্কার।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) : রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠীর অর্থায়নে পরিচালিত হয় থিঙ্কট্যাঙ্কটি। সরকারের সাথে নানা বিষয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে তারা। এ প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো নিরঞ্জন সাহু প্রতিষ্ঠানের সাইটে যে নিবন্ধটি লিখেছেন, তার শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশে নির্বাচন : শেখ হাসিনা বিপুল গরিষ্ঠতায় জিতলেন ঠিকই, কিন্তু খোয়ালেন কিছুটা গণতন্ত্রও’। নিবন্ধে তিনি সরাসরি মন্তব্য করেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, বৈচিত্র্য আর স্বাধীনতার নিরিখে একাদশ সাধারণ নির্বাচন বাংলাদেশকে নিঃসন্দেহে দরিদ্রতর করেছে। যেভাবে আওয়ামী লীগ ও তার শরিকেরা প্রায় ৯০ শতাংশ আসন জিতেছে, তা দেশটিতে মেরুকরণ বা বিভাজনকে আরো তীব্র করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি নজিরবিহীনভাবে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন হওয়ায় শেখ হাসিনার সরকার আরো বেশি করে স্বেচ্ছাচার ও একদলীয় গণতন্ত্রের দিকে ঝুঁকবে বলে যে অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে নিবন্ধে।
ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস (ইডসা) : এ থিঙ্কট্যাঙ্কটি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায়। সরকারি অর্থায়নেই পরিচালিত হয় তাদের কার্যক্রম, যদিও তারা গবেষণা করে স্বাধীনভাবেই। তাদের হোমপেজে ‘বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচন ২০১৮ : বিরোধীদের জন্য এরপর কী?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন রিসার্চ ফেলো ও বাংলাদেশ গবেষক স্মৃতি এস পট্টনায়ক। সেখানে তার দীর্ঘ বিশ্লেষণে লিখেছেন, বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত এমন একটি নির্বাচন কমিশন গড়ে তুলতে পারেনি, যাকে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতশূন্য বলে মনে করা যায়। এমন কমিশনের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে এটি কোনো বিরোধী দলই বিশ্বাস করে না। পট্টনায়ক পূর্বাভাস করেছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে যারা উপকৃত হয়েছেন, তাদের নিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। আর সেটাকে ভাঙা বিরোধীদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার একটা নিজস্ব সুবিধা আছেই।
বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (ভিআইএফ) : দিল্লির কূটনৈতিক এলাকা চাণক্যপুরীতে অবস্থিত এ গবেষণা সংস্থা তাদের ভাবনাচিন্তায় ‘সেন্টার-রাইট’ (মধ্য-দক্ষিণপন্থী) বলেই পরিচিত। বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ঠ এই কেন্দ্রটির প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেক বেড়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো ড. শ্রীরাধা দত্ত তাদের সাইটে যে নিবন্ধটি লিখেছেন তার শিরোনাম ‘বাংলাদেশ : যেভাবে ফায়দা নিচ্ছে তার অবস্থানগত সুবিধার।’ তাতে ড. দত্ত দেখিয়েছেন, ভারত ও চীন এই দুই এশীয় পরাশক্তির মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে কিভাবে তারা স্ট্র্যাটেজিক সুবিধা আহরণ করছে। বাংলাদেশকে ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের সিল্ক রোড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারত ও চীন যে পরপর শেখ হাসিনার নির্বাচনী সাফল্যের পেছনে জোরালো সমর্থন জানিয়েছে, তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয়। এ ছাড়া শেখ হাসিনার অসহিষ্ণুতায় ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে দমন করার পন্থায় বিরোধী দল নিজেদের একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেছিল। অবশ্য এর পরও উপসংহারে তিনি লিখেছেনÑ ‘নির্বাচনী রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্কটের পটভূমিতে শেখ হাসিনাই যে একমাত্র স্থিতিশীলতার প্রতীক ও ভারতের জন্য সেরা বাজি’ সে কথাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন প্রতিবেদনে।


আরো সংবাদ



premium cement