১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে

পাঁচ মাসের স্থগিতাদেশে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন ভারপ্রাপ্তরা
-

বেসরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ এবং ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যদ সভাপতি গত সোমবার শিক্ষা সচিবের কাছে এ ধরনের আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ নেই। এ কারণে প্রতিষ্ঠানিক প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ সব সমস্যার কারণে একাধিক দফায় স্কুল বন্ধ ঘোষণাসহ প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাও বিঘিœত হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন গত সোমবার নয়া দিগন্তকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে স্থগিতাদেশ দ্রুত তুলে দেয়া হবে। যে সমস্যার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল তা নিয়ে কাজ চলছে। চলতি মাসের মধ্যে এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগ বিধিমালায় কিছু সংশোধনী আনা হবে। এ লক্ষ্য কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে দুই-একটি বৈঠকেই এসব চূড়ান্ত করে, সংশোধিত নতুন বিধিমালা জারি করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কলেজ ও ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এবং এ নিয়ে নিয়োগবাণিজ্য বন্ধ করতেই গত ২৮ আগস্ট ’১৮ ওই নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছিল।
মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ মাসের স্থগিতাদেশের ফলে সারা দেশের সহস্রাধিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়ে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে এরই মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। ভারপ্রাপ্তরা কোথাও কোথাও কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন। নামী-দামি প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নানা বাণিজ্যের সহযোগী হচ্ছেন। বছরের শেষে এবং বছরের শুরুতে নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত এবং যৌক্তিক ভর্তির ফি’র বেশি ও নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত ভর্তি করাতে শুরু করেছেন। এ জন্য ভারপ্রাপ্তরা শুধু গভর্নিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই এ সব করছেন। এ ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা গভর্নিং কমিটিকে (জিবি) দায়ী করে বলছেন, আমি তো ভারপ্রাপ্ত, জিবির নির্দেশের বাইরে কিছুই করার নেই আমার। জিবির নির্দেশেই বিভিন্ন ফি বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১০ বছর ধরে এ জন্যই দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে একটি মহল তার বিরোধিতা করে এবং মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডে তদ্বীর করে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। মহলটি চাচ্ছেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘বাইরোটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগ’ রীতিটি বহাল থাকুক। এ মহলটি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বড় অংশের সাথে কোচিং বাণিজ্যের অংশীদার, ক্লাসে পাঠদান না করিয়ে কোচিং-এ বাধ্য করা, শিক্ষক-কর্মচরী নিয়োগবাণিজ্য, স্কুল-কলেজ কেন্দ্রিক নানাধরনের বাণিজ্য যেমন, স্কুল-কলেজ চারটি শাখা মিলে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর স্কুল-কলেজ ড্রেসের কাপড় বাণিজ্য, ব্যাজ-আইডি কার্ড বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের আনানেয়ার জন্য পরিচালিত পরিবহন বাণিজ্যসহ নানা ধরনের বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে তৎপর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা এখন নিজেদের পদ ধরে রাখতে তৎপর। অনেক প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্তদের সাথে শিক্ষকদের অনেক ক্ষেত্রেই বনিবনা হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নির্দেশনা প্রতিপালন করছেন না শিক্ষকেরা। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এক ধরনের নৈরাজ্যের মুখে পড়েছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর ৬২টি কলেজ চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক দিয়ে, যার মধ্যে মহানগর উত্তরের ৩৫টি ও দক্ষিণের ২৭টি। এ ছাড়া ঢাকা জেলায় আটটি, নারায়ণগঞ্জে ১১টি, গাজীপুরে ২১টি, ফরিদপুরে ছয়টি, মুন্সিগঞ্জে তিনটি, টাঙ্গাইলে ৩২টি, কিশোরগঞ্জে ১৮টি, রাজবাড়ীতে ৯টি, নরসিংদীতে ১৭টি, মাদারীপুরে দু’টি, মানিকগঞ্জে তিনটি, গোপালগঞ্জে ছয়টি, শরীয়তপুরে দু’টি প্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে। একই সমস্যা রয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা, যাশোর, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডেই। সারা দেশে এক হাজার এক শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement