২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উন্নয়নের প্রচারণায় মাঠ প্রশাসন

ধানের শীষের বাধা পুলিশ
-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের টানা ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করছে মাঠ প্রশাসন। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তার সার্বিক চিত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে সম্প্রতি প্রকাশিত বই, লিফলেট, পোস্টার, বিলবোর্ড মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। অন্য দিকে প্রচারণার মাঠে নামতে পারছে না বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। ঢাকাসহ সারা দেশের কোথাও চোখে পড়ছে না ধানের শীষের পোস্টার। মাঠে নামলেই হামলার শিকার হতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হাতে। কোথাও কোথাও হামলার সময় পুলিশ সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় প্রার্থীকে সরাসরি গুলির ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছেন পাঁচ শতাধিক বিরোধী নেতাকর্মী।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ১০ বছরের অগ্রগতি ও সাফল্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই কৌশল নির্ধারণ করে সরকার। এ জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সব মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, তথ্য, গণযোগাযোগ, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের প্রধান ও তথ্য সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসব কাজ সমন্বয় করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হচ্ছে। আগের সব সরকারও তা করেছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগে সক্রিয় না থাকলেও উন্নয়ন প্রচারে এখন সবাই সক্রিয়। অনেক সরকারি দফতর সম্প্রতি ফেসবুক পেজ চালু করেছে। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রচার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম-কানুন না থাকায় সরকারের পক্ষে নিজেদের পছন্দমতো প্রচার চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটারদের মধ্যে প্রভাব পড়ে এমন কোনো প্রচার নির্বাচনের সময় সরকারি কর্মকর্তারা করতে পারেন না। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধির ১৪ ধারার ১ নম্বর উপধারায় লেখা আছেÑ ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার সরকারি কর্মসূচির সাথে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না।’
মাঠ প্রশাসনের সহযোগিতায় উন্নয়নের প্রচারণা চালালেও মাঠে নামতে পারছেন না বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা। মাঠে নামলেই হামলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন এমপির মনোনয়নপত্র গ্রহণ এবং জমাদানের সময় সংশ্লিষ্ট থানার ওসির উপস্থিতির ছবি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। ফৌজদারি মামলা না থাকলেও ইসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রাখে।
প্রচারণা শুরুর পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে পুলিশ। তারা বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকে।
গতকাল সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমির ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দিন আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কাছে লিখিত এ অভিযোগ করেন তিনি। হামলায় আহত ব্যক্তিদের নিয়ে ইসিতে হাজির হন তিনি।
অভিযোগ তিনি বলেন, সোমবার সাভার উপজেলার আমিনবাজারে গণসংযোগ চালাতে গেলে সাভার থানার ওসি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা করে তারা। এ ছাড়া গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতে তার অনেক নেতাকর্মী আহত হন। এমনকি পুলিশ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। চিঠিতে তিনি গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। আহত কর্মীদের সুচিকিৎসা ও ভাঙচুরকৃত গাড়ির ক্ষতিপূরণও চান। তিনি আরো উল্লেখ করেন, এর আগেও আমি এই ধরনের অভিযোগ করেছিলাম; কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে কোনো প্রতিকার পাইনি।
শনিবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও তার ব্যক্তিগত সহকারী ইকবাল হোসেনসহ একাধিক নেতাকর্মীকে লক্ষ্য করে ছড়রা গুলি ছোড়েন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ওসি আবদুল মজিদ। ওসি সরাসরি হত্যা চেষ্টার সাথে জড়িত জানিয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন খোকনের ছেলে ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর সেখানে শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ শেষ করার পর পুলিশ তাদের মিছিলের পেছনে অবস্থান নেয়। এরপর সোনাইমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মজিদসহ একদল পুলিশ সদস্য মিছিলের সামনে এসে অনবরত গুলিবর্ষণ শুরু করেন। ছড়রা গুলি মাহবুব উদ্দিন খোকনের থুতনিতে বিদ্ধ হয়। তিনি সাথে সাথে পেছনে ফিরলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মজিদ পুনরায় ছড়রা গুলি ছোড়ে। এতে তার পিঠে পাঁচটি ও হাতে দু’টি গুলি লাগে। তার ব্যক্তিগত সহকারী ইকবাল হোসেন ও অন্যান্য কর্মী-সমর্থকেরা তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলে পুলিশ তাদেরও লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তারা গুরুতর আহত হন। পরে সবাইকে নোয়াখালী সদর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
একই দিন সকালে গণসংযোগ চালানোর সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ওপর হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, আমাদের নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করে আহত করে। অন্য দিকে এই আহত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতিদিন নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, নতুন নতুন গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে।
আগের দিন শুক্রবার রাতে সিরাজগঞ্জ শহরে পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় রুমানা মাহমুদের পিঠ, পা ও হাতে গুলির স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়। এ ছাড়া গুলিতে শহর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেরিনার দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement