২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রতিষ্ঠার চার দশকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

-

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ভিসি প্রফেসর ড. মো: হারুন-উর-রশিদ আসকারীর নেতৃত্বে বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে নিতে অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছে। প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার বর্তমান প্রশাসনের অঙ্গীকার প্রতিনিয়ত বাস্তব রূপ পাচ্ছে বলে মনে করেন প্রশাসনের কর্তারা। তবে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর অনুষ্ঠিত তিনটি ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে অসঙ্গতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগসহ বেশ কিছু অনিয়মের কারণে প্রশাসনের এই অগ্রযাত্রাকে অনেকটা বাধাগ্রস্ত করেছে।
তবে সব কিছু পিছে রেখে আরো সতর্ক হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় বর্তমান প্রশাসন। একই সাথে তারা বিতর্ক সৃষ্টিকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখার কথা জানিয়েছেন। প্রশাসনের এক কর্তা ব্যক্তি বলেন, ‘কে প্রশাসনের নিকটস্থ আর কে দূরবর্তী এ বিষয়ে বিবেচনা না করে সবার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে কর্তৃপক্ষ’।
গত ৭ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন সফলভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে প্রায় ১০ হাজার ডিগ্রিধারীসহ প্রায় ১৪ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে, যা দেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কর্মকাণ্ড অভূতপূর্ব গতি লাভ করেছে। বিভাগগুলোতে বর্তমানে সেশনজট অনেকাংশে কমে এসেছে।
অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অতি সম্প্রতি অনুষদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে পাঁচটি থেকে আটটি করা হয়েছে। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভেঙে মানবিক অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ; ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভেঙে বিজ্ঞান অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদ এবং বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদ করা হয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে একসাথে আটটি যুগোপযোগী বিভাগ খোলা হয়েছে এবং ২০২১ সাল নাগাদ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগসংখ্যা দাঁড়াবে ৫৯টি। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজন ছাত্রীসহ ২২ জন বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। অগ্রগতির কাজকে ত্বরান্বিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময় ৮টা-২টার পরিবর্তে এখন ৯টা-৪টা ৩০মিনিট করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩২তম সিন্ডিকেট সভায় টিএসসিসি মিলনায়তনকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন’ নামকরণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৫তম সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপনের নীতিমালা গ্রহণ করে এবং এ বছর অনুষ্ঠিত ২৪২তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তানুসারে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. শামসুজ্জামান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণায় সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান প্রশাসন। ৫৩৭ কোটি সাত লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় খুব শিগগির ক্যাম্পাসে ৯টি দশতলা ভবন ও একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ এবং ১৮টি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন দ্বিতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের বি-ব্লক, শেখ রাসেল হলের এ-ব্লক ও অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ এবং মেডিক্যাল সেন্টার ও গেস্ট হাউজের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও রবীন্দ্র-নজরুল কলাভবন, প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের জন্য নির্মিতব্য পাঁচতলা আবাসিক ভবনের তৃতীয়তলা পর্যন্ত, ৫০০ কেভি সাবস্টেশন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিতব্য ১০তলা আবাসিক ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের ঊর্ধ্বমুখী ও আনুভূমিক সম্প্রসারণকাজ প্রায় শেষের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের বিভিন্ন রাস্তা মেরামত ও সংস্কারকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পানির ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছে এবং দৃষ্টিনন্দন লেক তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা ১২ হাজার ৮১২ জন (ছাত্র : ৮৬৪৭, ছাত্রী : ৪১৬৫; ৩১ মে ২০১৭ পর্যন্ত)। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ৪১০ জন, কর্মকর্তা ৪২৫ জন, সহায়ক কর্মচারী ২০৯ ও সাধারণ কর্মচারী ১৯০ জন। এমফিল কোর্সে ২৮৫ জন এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে গবেষণাকর্মে নিযুক্ত রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬২১ জনকে এমফিল এবং ৪২১ জনকে পিএইচডি প্রদান করা হয়েছে।
ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকীর শুভেচ্ছা। বিগত বছরগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত এবং অফিস সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় অনেকটা প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ আমরা প্রশাসন বরাবর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। সব ইতিবাচক এবং উন্নয়মূলক কাজে প্রশসনকে বরাবরের মতোই সহযোগিতা করবে ইবি শিক্ষক সমিতি। তবে সব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে আমরা কখনো আপস করব না।
ট্রেজারার প্রফেসর ড. সেলিম তোহা বলেন, ‘সমালোচকদের মন্তব্য গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে বর্তমান প্রশাসন। আমরা আমারদের সময় ভালোভাবে শেষ করতে চাই।’
প্রোভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নত স্নাতক তৈরির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে দিতে চাই।’ আবাসনসঙ্কট বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসন্ন বড় ধরনের উন্নয়ন বাজেটটি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আবাসনসঙ্কট অনেকটা কেটে যাবে।’
ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘সবাইকে প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকীর শুভেচ্ছ। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সার্বিক দিক থেকে এগিয়ে নিতে। কাজের ভুল সংশোধন করে আমরা আরো সতর্ক হয়ে এগোতে চাই। তাই আগামী দিনের স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়তে দলমত পিছে রেখে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সবাই সহযোগিতা করলে অবশ্যই আমরা সফল হবো। আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি বড় প্রতিষ্ঠান আর এর কার্যক্রমও ব্যপক। তাই অনেক সময় আমাদের নজরের বাইরে অপ্রীতিকর কিছু ঘটে থাকতে পারে। যেকোনো ধরনের অনিয়ম নজরে আসার সাথে সাথে আমারা পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।


আরো সংবাদ



premium cement