নারায়ণগঞ্জে ইলেকট্রিক ট্রেন প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন
দুই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ৫৫০ কোটি টাকা- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর একটি প্রকল্প নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ট্রেন চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে) পদ্ধতিতে যৌথভাবে বাংলাদেশ সরকার ও সিঙ্গাপুর সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব লাইট র্যাপিড ট্রানজিট স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কমিটির বৈঠকে দু’টি প্রকল্পের ব্যয়ও প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, সরকার টু সরকার ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে লাইট র্যাপিড ট্রানজিট (এলআরটি) স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইলেকট্রিক ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে জনগণ। এ ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাঠানো প্রস্তাবের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এ ট্রেন চলবে দু’টি রুটে। একটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ থেকে চাষাঢ়া হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের পথ। অন্যটি হচ্ছে চট্টগ্রাম রোড থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। দুই লাইনের ইন্টারচেঞ্জ স্টেশন হবে চাষাঢ়ায়।
তবে এ জন্য কত টাকা ব্যয় হবে সেটা জানাতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, এটা সবেমাত্র নীতিগত অনুমোদন দেয়া হলো। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর যৌথভাবে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে তারপর ব্যয়ের বিষয়টি ঠিক করবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের ৩৮৮টি দেশে এ ধরনের ট্রেন রয়েছে।
প্রকল্পে অনিয়ম : পুনরায় টেন্ডারের নির্দেশ
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে তরুণদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তিনটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। কিন্তু এসব প্রকল্পে অনিয়ম খুঁজে পায় মূল্যায়ন কমিটি। তাই ফের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করতে বলা হয়েছে। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশের ৬৪ জেলাকে ১৫টি লটে বিভক্ত করে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তরুণদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তিনটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এ তিনটি প্রকল্পের মূল্যায়ন পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু মূল্যায়ন শেষ হওয়ার পরে প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ এসেছিল। সে কারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নিজে থেকেই চাচ্ছে যে, এ প্রকল্পগুলোর টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করতে। এ প্রকল্পগুলোর কাজ আবার নতুনভাবে শুরু করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে কমিটি বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। প্রকল্পগুলো হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্রকল্প।
দুই প্রকল্পে ব্যয় বাড়ল ৫৪৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা
দুই প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৫৪৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি সংক্রান্ত দু’টি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তির অতিরিক্ত কাজ বাস্তবায়নের নিমিত্ত ব্যয় বেড়েছে ৫০৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর আগে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ব্যয় বেড়ে বর্তমান ব্যয় দাঁড়াল ১ হাজার ৬৩১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট : ইম্প্রুভমেন্ট অব বেনাপোল অ্যান্ড বুড়িমারী স্থলবন্দর’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব বেনাপোল স্থলবন্দর’ প্যাকেজের ব্যয়বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে কমিটি। এ প্যাকেজ বাস্তবায়নে আগে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে ৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা বেড়ে বর্তমানে ব্যয় দাঁড়াল ১২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।