২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
আমি ক্রীতদাসের হাসি হাসি না

সরকার নির্বাচন কমিশনকে গিলে ফেলেছে : রিজভী

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবির রিজভী : নয়া দিগন্ত -

ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) গিলে ফেলেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ইসি নেপথ্য লোকের বার্তানুযায়ী কাজ করছে বলেই ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় চোখ বন্ধ করে রাখে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ নেই বলেই এখন পর্যন্ত তাদের কোনো কাজ তারিফযোগ্য হয়নি। আইন, আদালত ও প্রশাসনকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করার পরে কব্জার মধ্যে থাকা নির্বাচন কমিশনকে একেবারে গিলে ফেলেছে সরকার। এখন নোংরাভাবে ইসিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ ইসির কতিপয় কর্মকর্তা সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আত্মা বিক্রির শর্তেই কতিপয় নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মো: শরীফুল আলম, মুহাম্মদ আবদুল আউয়াল খান, শাহীন শওকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘আমি ক্রীতদাসের হাসি হাসি না’: আওয়ামী লীগের নেতা হাছান মাহমুদের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিজভী বলেন, উনি বলেছেন যে, আমি নাকি হাসি না। আমি শুধু আপনাদের এইটুকু বলব, আমি ক্রীতদাসের হাসি হাসতে জানি না। আপনারা এত গুম খুন অত্যাচার, আমার ডান দিক থেকে বাম দিক থেকে আমার সহকর্মী সতীর্থদের ধরবেন তারপর তো আমি ক্রীতদাসের হাসি হাসতে পারব না; আপনারা পারেন। কারণ দখল আর দুর্নীতিতে মত্ত যে সরকার আপনাদের মুখে তো ক্রীতদাসের হাসি থাকবে। আমার মুখে ক্রীতদাসের হাসি থাকবে না।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুলিশের বেপরোয়া আচরণ ও হয়রানিতে আবারো ‘ফেনী মার্কা’ নির্বাচনের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা ও গ্রেফতার পাহাড়ি ঢলের মতো ধেয়ে চলেছে দেশব্যাপী। গত রোববারও বিভিন্ন জেলায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বিনা মামলায়, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্তৃক প্রিজাইডিং অফিসারদের নাম চাওয়া, বিএনপির কোনো লোক নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে কি না ইত্যাদি তদারকি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের প্রকাশ্য ও গোপন হুমকিতে দেশজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনাচারে লিপ্ত হয়েছে।
রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। শুধু তাই নয়, প্রশাসনও নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার কঠোরভাবে। দেশ জুড়ে এখনো গায়েবি মামলা, গ্রেফতার, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে আগের মতোই। একজন নির্বাচন কমিশনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ইসির অধীনে নেয়ার প্রস্তাব করলেও সিইসি ও কতিপয় কমিশনার তাতে আপত্তি জানান। মূলত সরকারের হুকুম তামিল করতেই ব্যস্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা ও আওয়ামী নেতারা এখন কথা বলছেন একই সুরে। বেশ কিছুদিন আগে সিইসি বলেছিলেন বাংলাদেশে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, গত দুদিন আগে আরেকজন কমিশনার বললেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, বাংলাদেশেও শতভাগ স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন হবে না।’ আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাদের
বক্তব্য এক আশঙ্কাজনক অশনি সঙ্কেত। সিইসি ও ইসির বক্তব্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও ভোট ডাকাতিতে উৎসাহিত করবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না বলে তারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তারা শপথ ভঙ্গ করেছেন। যে বক্তব্যটি অবৈধ শাসকগোষ্ঠীকেই উৎসাহ যোগাবে।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনকে চাপ প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে নির্বাচনী জনমত জরিপের নামে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কৃত্রিমভাবে জনমত বেশি দেখিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। যা সুস্পষ্ট আচরণ বিধি লঙ্ঘনই নয়, ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নগ্ন দালালির নামান্তর মাত্র। বিটিভিসহ বেসরকারি টেলিভিশনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কোনো চিহ্নই নেই। আমি অবিলম্বে সব টেলিভিশনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের নেতা সোহাগ ভুঁইয়া ও যশোর-৬ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বক্কর আবুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আটকের পর অস্বীকার করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাদের জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান রিজভী। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমের পক্ষে ভৈরবে শান্তিপূর্ণ উঠান বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা, ভৈরবে দলের স্থানীয় নেতা রফিকুল ইসলামের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা ও কুলিয়ারচরের ওসমানপুর ইউনিয়ন সভাপতি শহিদুল্লাহর বাড়িতে হামলা হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দাবি করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসা থেকে ছয়জনসহ চাঁদপুর, ফেনী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় গতকাল নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তালিকা তুলে ধরা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement