ফেরিস্বল্পতা ও নাব্যতা সঙ্কটে সবসময় যানবাহনের লম্বা লাইন
- গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা
- ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে নাব্যতা সঙ্কটের পাশাপাশি ফেরি স্বল্পতায় নদী পার হতে শত শত যানবাহন ও কাঁচামালের ট্রাক সব সময় আটকে থাকছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের। চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা।
জানা যায়, নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে ঘন কুয়াশায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই এ নৌপথে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ছে। প্রতিদিন কিছু গাড়ি পার হওয়ার পর লাইন একটু ছোট হলেও আবার নতুন গাড়ি এলে বেড়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিদিন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে তিন-চার কিলোমিটারজুড়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাঁচামালের ট্রাক পার করা হলেও ফেরি সঙ্কটে শত শত কাঁচামাল ভর্তি ট্রাকও আটকে থাকছে। অধিক সময় আটকে থাকায় কাঁচামালে পচন ধরে ব্যবসায়ীরা লোকশানে পড়ছেন।
সরেজমিন দুপুর সারে ১২টায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ইমাম বাড়া দরবার পর্যন্ত যানবাহনের লাইন দেখা যায়। এ সময় শিশুসহ যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়।
মহাসড়কে গতকাল দুপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলকপি ভর্তি যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক আলতাফ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে এসে আটকা পড়েছি। এখনো ফেরির কাছে যেতে পারিনি। ওই কপির ব্যাপারী আলমাছ আলী জানান, আটকা থাকায় কপিতে পচন ধরে গন্ধ বেড় হচ্ছে। ওজনে ঘাটতি হচ্ছে। এভাবে থাকলে পাঁচ-সাত হাজার টাকা লোকসান হবে।
দালাল ও পুলিশ টাকা চেয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, তাদের টাকা দিতে পারলে রাতেই পার হয়ে চলে যেতে পারতাম। টাকা না দেয়াতেই এ ভোগান্তি। পুলিশ চায় দুই হাজার টাকা, দালাল চায় এক হাজার টাকা। এত টাকা নাই বলেই তো আটকে আছি।
গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ৪নং ফেরিঘাটে কথা হয় সোহাগ পরিবহনের সুপারভাইজার রাকিবুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮.৪৫ মিনিটে খুলনা রয়েল থেকে ছেড়ে এসে রাত ১টায় তিনি ঘাটে আটকা পড়েন। সাড়ে ১২ ঘণ্টা ঘাটে আটকে থাকার পর তিনি পন্টুনের কাছে এসেছেন। তখনো তিনি ফেরিতে উঠতে পারেননি। ওই পরিবহনের যাত্রী ইশতেয়াক হোসেন জানান, তার ফ্লাইট হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ঢাকায় পৌঁছবেন কখন এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
দৌলতদিয়া ঘাটের যানজটকে কৃত্রিম সঙ্কট দাবি করে অনেক যাত্রী বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন সরকারের লাখ লাখ টাকা আয় হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের এ ঘাটে কেন স্থায়ী সমাধান হয় না। এটা সরকারি লোকজনের তৈরি করা কৃত্রিম সঙ্কট বলেই এর সমাধান নেই।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দেখা যায়, শীত মওসুম শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই এ নৌপথে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ড্রেজিং করে ফেরি চলাচলের চ্যানেলে ঠিক রাখা হচ্ছে। ডুবোচরের ভয়ে ফেরি চলাচলে বিঘœ ঘটছে। চড়ায় আটকে পড়ার ভয়ে ফেরিগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ফেরি স্বল্পতা।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, এ নৌপথের বহরে থাকা পাঁচটি বড় ফেরি মেরামতের কাজে থাকায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, বহরে থাকা বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর ও মতিউর ফেরি দু’টির মেরামতের কাজ চলছে। এ ছাড়া গত ১ মাস ধরে কেরামত আলী, ১৫ দিন ধরে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন ও গত বৃহস্পতিবার থেকে আমানত শাহ ফেরিটি মেরামতের জন্য বসা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ নৌপথের যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক রাখতে কমপক্ষে আটটি বড় ফেরিসহ ১৮টি ফেরি প্রয়োজন হয়। বর্তমানে এখানে পাঁচটি বড় ফেরিসহ ১৪টি ফেরি রয়েছে। ফলে ফেরি স্বল্পতায় কিছু যানবহন আটকা পড়েছে। বহরের ফেরিগুলো ফিরে এলে যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।