২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা

৬৭ ভাগ লোক অসংক্রামক রোগে মারা যায়

-

সাভারের বিরুলিয়ার ব্র্যাক-সিডিএমে গতকাল চতুর্থ আন্তর্জাতিক জনগণের স্বাস্থ্য সম্মেলনে প্রধান অতিথি হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রি. (অব:) আব্দুল মালিক বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা ৬৭ ভাগ লোক অসংক্রামক রোগে মারা যায়। এ ছাড়া ১২ শতাংশ লোক ক্যান্সার, ৩০ শতাংশ লোক হৃদরোগ, ৩ শতাংশ লোক ডায়াবেটিস ও ১২ শতাংশ লোক অন্যান্য রোগে মারা যায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্মেলন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইন্ডারস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রান বাউম ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় অধ্যাপক ব্রি. (অব:) আব্দুল মালিক বলেন, একটি দেশের সমৃদ্ধি নির্ভর করে জনগণের গুণগত শিক্ষা, উন্নত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থার ওপর। ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ এসব রোগের নির্ণয় এবং চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আমাদের মতো উন্নয়শীল দেশের জনগণ কিভাবে এসব রোগ সৃষ্টি হয় তা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং এর চিকিৎসা তাদের আয়ত্তের বাইরে। সরকারের একার পক্ষে এসব রোগ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাজনৈতিক দল, নাগরিকসমাজ, গণমাধ্যম, পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতা, বুদ্ধিজীবী সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যাতে তৃণমূলের জনগণ এসব রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। সরকারকে হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বীমা, চিকিৎসার জন্য সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের বিষয়েও জোর দেন।
সভাপতির বক্তব্যে স্যার ফজলে হোসেন আবেদ ইতিহাস থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে রাজনৈতিক উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপে বিশেষ করে যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিতে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশে সরকারের উদ্যোগে ১৯৮২ সালে জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিগগিরই একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিনি সব রাজনৈতিক দলকে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়কে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি নাগরিকসমাজ, উন্নয়ন সংগঠন এবং সর্বোপরি জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পরপরই অনুষ্ঠিত প্লেনারি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ব্রিজিত লায়ড, গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর, পিএইচএম। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. ইডোরাডো এসপিনোযা, স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী, এল সালভাডর। প্লেনারি অধিবেশনে বক্তব্য দেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্টার্ন কেপ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ডেভিড স্যান্ডারস এবং চায়রা বোডিনি অধ্যাপক বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালি।
এল সালভাদরের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ড. ইডোরাডো এসপিনোযা তার বক্তব্যে জনগণের প্রাথমিক সেবা অর্জিত না হওয়ার পেছনে প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে বিশ^ব্যাপী উন্নয়ন মডেলের নেতিবাচক প্রভাব উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, দ্রুত উন্নয়নের বর্তমান মডেল জলবায়ু পরিবর্তনসহ জনগণের স্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়াও দুর্নীতি, ব্যাপক বেসরকারীকরণ, পর্যাপ্ত সম্পদের জোগানের অভাবকেও জনগণের স্বাস্থ্যসেবার কাক্সিক্ষত মান অর্জিত না হওয়ার পেছনে দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পিএইচএমের কো-চেয়ারপারসন ডেভিড স্যান্ডার্স স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নব্য উদারতাবাদী বিশ^ায়নের প্রভাবকে স্বাস্থ্যসেবায় কাক্সিক্ষত অভিগম্যতা না হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার কাক্সিক্ষত মান অর্জিত না হওয়ার পেছনে দারিদ্র্যের প্রভাবের কথাও উল্লেখ করেন।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ কিয়ারা বদিনি স্বাস্থ্যসেবায় সার্বজনীন অভিগম্যতা বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য আন্দোলনের সাথে জনগণকে আরো কিভাবে সক্রিয় করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।
পিএইচএ-৪ এর অন্যতম সংগঠক অমিত সেন গুপ্ত উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে বক্তব্যে অসাম্যকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সম্মেলন চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দিনে উদ্বোধনী এবং উদ্বোধনী প্লেনারি অধিবেশন ছাড়াও উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বৈশি^ক কাঠামো, এসডিজি, চলতি অন্যায্য ব্যবস্থা আর কত? বাণিজ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং দখলদারিত্ব, সামরিক হস্তক্ষেপ এবং শরণার্থী সমস্যা ইত্যাদি ইস্যুতে প্লেনারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে প্রায় ৭০০ বিদেশীসহ বাংলাদেশ থেকে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, চিকিৎসকেরাসহ প্রায় এক হাজার ৫০০ প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন পিএইচএম-বাংলাদেশের চেয়ারপারসন জাকির হোসেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবেলায় এ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দিকনির্দেশনা ও কৌশল প্রণয়নের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য বেনাপোল সীমান্তে ৭০ লাখ টাকার স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক

সকল